‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৮:৫৬,অপরাহ্ন ১৯ জুন ২০১৫
নিউজি ডেস্ক::
৪’বছরের সাক্ষী চকবাজারের ইফতারি। এতটা বছর ধরেই রোজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই বাক্য’টাই হাজার-বার উচ্চারিত হয়। “বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়।” ভোজনরসিক ভাঙালির ইফতারিতে এটি চিরচেনা স্বাধের।
আজ শুক্রবার রোজার প্রথম দিনেই জমে উঠেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের মুখরচক এই ইফতারির আয়োজন। সূর্য’টা হেলে পরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘চকে’ পা ফেলার জায়গাটা পেতেও কষ্ট হয়। বাহারি স্বাধের ইফতারির আইটেম। এ যেন অন্য এক ঢাকা, অন্য এক দেশ।
চকের ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদের সামনেই মূলত মূল আয়োজন। খাবারের দোকানীরা, দোকানের বাইরেও পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যায়। কোথাও-বা রাস্তার দু-ধারে, মাঝেও সাজাতে দেখা যায় জিভে জল চলে আসার মত উপক্রম না হয়ে বাঁচা যায় না।
বড় বাপের পোলায় খায়- “বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়।” এটি একটি প্রচারনার শ্লোগান মনে হলেও। আসলে এটি একটি খাবারের নাম। যার বর্তমান ঠোঙ্গা মূল্য ৪০০ টাকা। এই খাবার’টি নিয়েই চকের ইফতার বাজারের ঐতিহ্যের সূত্রপাত। শত বছরের বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই মোখরচক খাবারের আয়োজনের ত্রান কর্তা এখন আহমদ হোসেন সালেহিন। জানতে চাইলে তিনি বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভকে বলেন, ১২টি আইটেম দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার’টি। তার মধ্যে রয়েছে, সুতিকাবাব, কাঠিকাবাব, ডাল, ডিম, কলিজা, গরুর মগজ, খাসির মাংস, আলুভাজি, মোরগের মাংস, কোয়েলের রোস্ট, গাওয়া ঘি, এলাচি, দারুচিনি, সাদা গোলমরিচ, কালো গোলমরিচ, কাবাব, চিনি, জায়ফল-জয়ত্রী, জিরা, জাফরান, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, শুকনামরিচ, হলুদ।
অবস্য সেখানে এক’ই নামের অনেক দোকান দেখা গেলেও আসল দোকানের পরিচয় দেন ষাটর্ধ্ব এক স্থানীয়, তার মতে-‘ জন্মের পর থেক্কা’ই দেইখা আইতাছি, শাহী মসজিদের গেইটের অইপারে’ই বেচা কেনা হয়। আব্বে হালা অহ দেখতাছি অনেই দোকান হইছে। এক কোলাইবার পারেনা তো হেরলাইগাই এত দোকান” পরে অনেকের সাথেই কথা বলে জানা যায় শাহি মসজিদের অপজিটের দোকান’ই হল আসল “বাপের পোলায় খায়”।
এছাড়াও ইফতারির আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, কাবাব, খাসি ও মুরগির রানের ফ্রাই, মুরগি সহ বিভিন্ন পাখির রোস্ট, ১২ টি আইটেম দিয়ে তৈরি দই বরা ও মাঠা, টিক্কা ও পরটা, জিলাপি, খেজুর, বোরহানি, লাবাং, আচার, আর অর্ডার দিয়ে আস্ত খাসিও নেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ১৭০২ সালে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এ বাজারকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক বাজারে পরিণত করেন। পরে ওয়াল্টার নামের এক ব্রিটিশ এ জায়গাটি আরও আধুনিক করে গড়ে তোলেন। কোমর সমান দেয়াল দিয়ে ঘেরা চকবাজারে প্রবেশের জন্য তখন ১৬টি গেইট ছিল। চকবাজারকে সে সময় চৌকবন্দর নামে ডাকা হত। সেই আমলেই চকবাজারে ইফতার বিক্রির প্রথা চালু হয়। এখন কোমর সমান দেয়াল আর ১৬টি গেইট না থাকলেও বাদশাহি আমলের ইফতারসহ আধুনিক সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়।