বিজেপির কাছে যাওয়ার চেষ্টায় বিএনপি; উদ্যোগ শুরু লন্ডন থেকে
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৫:১৩,অপরাহ্ন ১৬ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাপুটে সভাপতি অমিত শাহ’র মধ্যে কথিত ফোনালাপ নিয়ে সপ্তাহজুড়ে উত্তপ্ত ছিল গণমাধ্যম। ৭ জানুয়ারির রাতের সেই ফোনালাপ সত্যিই হয়েছিল কি-না তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিজেপি ও বিএনপির মধ্যে গত আট মাসে নিঃশব্দে যে একটা সেতু গড়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট। দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, যোগাযোগের গরজটা বেশি দেখা গেছে বিএনপি-র তরফ থেকেই।
দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বাংলা গণমাধ্যমকে বলছেন, “গত মে মাসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি যখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এল, সেদিন থেকেই আমরা বাংলাদেশে বিএনপির কাছে থেকে নানারকম ‘ফিলার’ পেতে শুরু করি। যার মূল বক্তব্য হল, আগে যা হওয়ার হয়েছে, বিজেপির সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে চায় আজকের বিএনপি। আওয়ামী লীগ যে এখন আর বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না, সেটাও তারা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা শুরু করে দেন।’
তবে সূত্রমতে, প্রথম পদক্ষেপটা ঢাকা নয়, শুরু হয়েছিল লন্ডন থেকে। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি’র স্বেচ্ছানির্বাসিত নেতা ও খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানই মে মাসে নরেন্দ্র মোদিকে বিপুল বিজয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ছোট্ট উপহার ও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন লন্ডন থেকে। তার সেই শুভেচ্ছা বার্তার ‘কুরিয়ার’ ছিলেন বিজেপির মাঝারি মাপের নেতা বিজয় জলি।
দিল্লির নেতা বিজয় জলি বিজেপি’র যে বিদেশ শাখা বা ‘ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অব বিজেপি’ আছে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। আর সেই সুবাদেই তার ঘন ঘন যাতায়াত ছিল লন্ডন, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে। লন্ডনে বিজয় জলির এরকমই কোনও এক সফরে তারেক রহমান এক সহযোগীর মাধ্যমে দুজনের আলাপের ব্যবস্থা করেন ও উপহার পৌঁছে দেন। বিজয় সেটা পৌঁছে দেন মোদির দফতরে। বিজেপি ও বিএনপি’র মধ্যে তখন থেকেই দারুণ সম্পর্ক এমনটা বলা যাবে না, কিন্তু বরফ গলার শুরু তখন থেকেই।
মোদি সরকারের গত আট মাসে বিজেপি’র নানা স্তরের নেতাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপি নেতৃত্বের সংযোগ তৈরির চেষ্টা চলেছে। এর আগের ইউপিএ আমলে ভারত সরকার ও কংগ্রেসের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’ গান্ধীদের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকার তথা আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক হয়েছিল, বিএনপি মনে করছিল সেটা ভাঙার চমৎকার একটা সুযোগ হল বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার ফলে। তাই মতাদর্শগত যতই বিরোধ থাকুক, বিজেপি’র অশোকা রোডের সদর দফতরে বা দিল্লিতে বিজেপি মন্ত্রীদের বাংলোগুলোতে ‘দিল্লি বেড়াতে আসা’ বিএনপি’র ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের আনাগোনা শুরু তখন থেকেই।
আগস্ট নাগাদ দিল্লিতে এসেছিল বিএনপি’র এমনই এক প্রতিনিধি দল। যাতে দুচারজন বেশ প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন। সেই নেতারা দেখা করেন বিজেপি’র অত্যন্ত ক্ষমতাশালী সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে। রাম মাধব আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের নেতা। দীর্ঘদিন সঙ্ঘের প্রধান মুখপাত্রও ছিলেন তিনি। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আরএসএসই তাকে বিজেপি’তে পাঠিয়েছে, সঙ্ঘ আর দলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কঠিন দায়িত্ব দিয়ে। রাম মাধবকে ওই বিএনপি নেতারা শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ঢাকা যেতে আমন্ত্রণও জানান। বিএনপি নেতারাও কীভাবে হিন্দুদের দুর্গাপুজোয় উৎসাহ দেন সেটা নিজের চোখে দেখে আসতে বলেন মাধবকে।
সূত্র জানায়, রাম মাধব ওই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অক্টোবরে অন্য কাজের চাপ এসে যাওয়ায় তার আর ঢাকা যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে বিএনপি নেতাদের দিল্লি যাতায়াত তাতে বন্ধ হয়নি। একজন বেশ ছোট মাপের বিএনপি নেতা নাম-পরিচয় গোপন করে নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দফতরেও পৌঁছে যান। এমন কী তার সঙ্গে গ্রুপ ছবিও তোলেন।
এর বাইরেও বিএনপি’র সঙ্গে বিজেপি যে একটা ট্র্যাক-টু যোগাযোগের রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে, সেটা বেশ পরিষ্কার। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী সাংবাদিক এম জে আকবর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। দল তাকে জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও দলের নানা দিক তিনি সামলাচ্ছেন। এই আকবরও সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন। আর সেই সময় শুধু আওয়ামী লীগ বা সরকারের নীতি-নির্ধারক নন, বিএনপি’র বহু নেতার সঙ্গেও তার ‘সিরিয়াস’ আলোচনা হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা-অমিত শাহর কথিত ফোনালাপ নিয়ে দুপক্ষের দাবি বা পাল্টা দাবিতে কেন এত ধোঁয়াশা? কী ঘটেছিল সেদিন? বিজেপি’র সেটা খোলাখুলি জানাতে অসুবিধাই বা কোথায়?