বাড়ছে মোবাইল ফোনে অভিনব প্রতারণা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৮:০৭,অপরাহ্ন ১৬ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: মোবাইল ফোনে প্রতারণা দিন দিন বাড়ছে। এ নিয়ে শঙ্কায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, কিছু অসাধু মোবাইল ব্যবহারকারী বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ জনগণকে বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এমন অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষের পরিবার আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারণার কিছু ধরন উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিরেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিটিআরসিতে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বা চক্র গ্রামীণফোন বা বাংলালিংকসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের কলসেন্টারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদেরকে ফোন করে বলে যে, তার ব্যবহৃত নম্বরটি লটারিতে লাকি নম্বর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তিনি ১০ লাখ টাকা এমনকি মোটরসাইকেল বা গাড়ি পুরস্কার বা পুরস্কারের বদলে সমপরিমাণ অর্থ বিজয়ী হিসেবে পাবেন। পরে এটাও বলা হয় যে, ওই পুরস্কার পেতে হলে ট্যাক্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন নম্বরে ফ্লেক্সিলোড বা বিকাশ করতে বলা হয়।
এরপর প্রতারকচক্র বিভিন্ন ডায়াল কোড বা নম্বর উল্লেখ করে তাতে ডায়াল করতে বলে। ওই নম্বরে ডায়ালের মাধ্যমে গ্রাহকের ফোনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্রাহকের নিকট প্রতারকের আর কোন তথ্য সংরক্ষিত থাকে না। এ ধরনের প্রতারণার জন্য অনেক নিরীহ মানুষ লাখ লাখ টাকাসহ বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন।
রিচার্জের নামে প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতারক চক্রের মোবাইল নম্বর থেকে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ ফ্লেক্সিলোড হওয়ার পর এসএমএস পাঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বর থেকে প্রতারক চক্র ফোন করে বলে ভুলবশত তার ফ্লেক্সিলোডের টাকা ভিকটিমের মোবাইলে চলে গেছে। ওই প্রতারকচক্র ফ্লেক্সিলোডের সমপরিমাণ টাকা বিকাশ বা ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করে।
প্রতারক চক্রটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মিস কলের মাধ্যমে প্রতারণা করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রতারক চক্র কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে অপরিচিত নম্বর থেকে মিস কল দিয়ে ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফোন আশা করে। সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীরা ওই সব নম্বরে কল করলেই তার ফোনের ব্যালেন্স শূন্যতে চলে আসে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোবাইল প্রতারণার প্রতিবেদনে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতারক চক্র গভীর রাতে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন সূরা বা ওয়াজ শুনিয়ে কথা শুরু করে। প্রতারক চক্র কাউকে কিছু না জানানোর শর্তে প্রথমে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং কথার এক পর্যায়ে তুই অনেক ধন-সম্পদের মালিক হবি, তোর কপালে স্বর্ণের খণ্ড বা টাকার কলস রয়েছে ইত্যাদি কথা বলে। প্রতারকচক্র এ ধরনের বিভিন্ন লোভনীয় কথাবার্তা বলে এক সময় টাকা চায়।
এদিকে ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যমে হয়রানির কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধ বা প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে। বর্তমানে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় মোবাইল কল থেকে শুরু করে ছবি তোলা, অডিও শোনা, ভিডিও ক্যাপচারিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও মানুষ ঘরে বসে সম্পন্ন করছে।
অসাধু অপরাধীরা সুবিধাজনক সময়ে বন্ধু বা সহপাঠী বা পরিবারের সঙ্গে একান্ত মুহূর্তে তোলা ছবি বা ভিডিও স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে সংরক্ষিত রাখছে। পরে যে কোনো ঘটনার সূত্র ধরে সুপার ইম্পোজের মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা অশ্লীল স্থিরচিত্র তৈরি করে ছবি, ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে। যারা অপরাধী চক্রের ফাঁদে পড়ে অর্থের যোগান দিতে পারছে না তাদের ছবি পর্নো সাইট, ফেসবুক বা ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।