বার্ন ইউনিটেই হলো শুটিং!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১০:৩৮,অপরাহ্ন ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন রোগীরা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তখন তাদের সুবিধা অসুবিধা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সেখানেই হয়ে গেলো শ্যুটিং। শুটিং পরিচালনাকারীর নাম রফিকুল ইসলাম বুলবুল। নিজেকে টিভি সাংবাদিক বলে দাবি করেছেন তিনি।
গতকাল রাতের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ওয়ার্ডের ঘটনা এটি। । সবচেয়ে বিপজ্জনক ৬০ জন দগ্ধ রোগীকে রাখা হয়েছে এই ইউনিটে। এমনিতেই দগ্ধ রোগীদের ওয়ার্ডে বেশি লোকসমাগমে নিষেধ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারন দর্শনার্থীদের ভিড় ও অসতর্কতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এতে দগ্ধ রোগীদের সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হার। কিন্তু এসব কিছুর মধ্য দিয়েই রীতিমত ‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ শুটিং হলো বার্ন ইউনিটে।
১৯ বছর বয়সী সবুজের দুই হাত ও বুকে ব্যান্ডেজ করা। সবুজ গত বুধবার গাজীপুরে বাসে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়েছেন। এ অবস্থায়ই তার অনুমতি না নিয়েই একজন অভিনেত্রী তার মাথা বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে ক্যামেরার সামনে শট দিচ্ছিলেন। সবুজের মাথায় হাত রেখে গ্লিসারিন দিয়ে কৃত্রিম কান্নার অভিনয় করছিলেন তিনি।
শুটিং পরিচালনাকারীর পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। কোন পত্রিকা? জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্য কাজ করছেন বলে দাবি করেন। তাঁকে বলা হলো, বিটিভির তো নিজস্ব লোকবল থাকে, এভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করছেন কেন? তখন তিনি বলেন, ‘অই তো হলো। আমি পারসোনালি কাজ করছি, তারপর বিটিভিকে দেব। ’
তবে এ ব্যাপারে বিটিভির উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) বাহার উদ্দিন বলেন, বিটিভি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে হরতাল অবরোধের শিকার রোগীদের নিয়ে ব্যবসা করার জন্য কেউ এ কাজটি করছে। এই ব্যক্তি বা তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটিভির কোনো সম্পর্ক নেই। বিটিভির প্যাকেজ নীতির আওতায় কেউ কিছু দিতে চাইলে তাঁদেরকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া বা ধাপ পার হতে হয়। হুট করে কেউ বিটিভিকে কিছু দিতে পারে না।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, এ ধরনের শুটিংয়ের জন্য আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিতে কেউ আসেনি।
রফিকুল ইসলামের দেওয়া ভিজিটিং কার্ডে ইংরেজিতে প্রেস লেখা। রাজধানীর ২৬ মণিপুরীপাড়া ঠিকানায় পত্রিকার নাম হিসেবে দৈনিক এই বাংলা (সারা বাংলার মানুষের কথা), সাপ্তাহিক দূর্নীতি রিপোর্ট এবং ইংরেজিতে উইকলি ফ্রাইডে রিভিউ লেখা কার্ডে। সাপ্তাহিকের নামটাও (দুর্নীতি) ভুল বানানে লেখা। আর রফিকুল ইসলামের পদবি লেখা রয়েছে সিনিয়র এডিটর/অথর অ্যান্ড ফিল্ম ডিরেক্টর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ন ইউনিটের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বার্ন ইউনিটে রোগীদের নিয়ে শুটিং করার অনুমতি দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
সূত্র: প্রথম আলো