বাজারে প্রশ্নপত্র পাওয়া গেলে পরীক্ষা কিসের: সাবেক শিক্ষামন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০১:০৮,অপরাহ্ন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক বলেছেন, ‘পরীক্ষার কথা বলে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মায়াকান্না দেখাচ্ছেন। যে দেশে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সে দেশে পরীক্ষার কোনো মূল্য নেই।’পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বিশেষ অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা আবার কিসের? গোটা দেশের মানুষেইতো আজ কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের দেয়া আজকের এ পরীক্ষায় উক্তীর্ণ হওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সকলকেই পরীক্ষায় পাস করতে হবে। তাই এ পরীক্ষার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘চলমান আন্দোলন হরতাল-অবরোধে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে হাসিনার সরকারের মন্ত্রী আমলাদের দুর্নীতির অর্থের চেয়ে অনেক কম। বর্তমান হাসিনা সরকার বুঝতে পারছে দিনদিন তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা।’ পেনসিলভানিয়া বিএনপির সভাপতি শাহ ফরিদের সভাপতিত্বে এবং স্থানীয় বিএনপির নেতা এম এ কালাম শরীফ ও নাজিম উদ্দিন জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া সরকারের পৈশাচিক আচরণ বলে মন্তব্য করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা প্রায়ই একটি কথা বলে থাকেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছেন, দেশের মানুষ সেই ভুলের খেসারত কেন দেবে? খালেদা জিয়া প্রহসনের নির্বাচনে না গিয়ে কোনো ভুল করেননি। ক্ষমতায় থেকে কখনো নির্বাচন হয় না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন তারা ছিনতাই করে নিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে গেলেও এমন হতো। তাই নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে কোনো ভুল হয়নি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা আরো বলেন, ‘বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে যে আচরণ করছে, তা অত্যন্ত বর্বরোচিত ও পৈশাচিক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বির প্রতি এমন আচরণ পৃথিবীর কোনো দেশের ইতিহাসে নেই। পৈশাচিক এ সরকারের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসএসসি পরীক্ষার দোহাই দিয়ে বিএনপির নেতাদের হাত-পা ধরে অবরোধ প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু জ্ঞানপাপী ওই শিক্ষামন্ত্রী একবারও তার নেত্রীকে অনুরোধ করে বলেননি সামনে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা তাই যেভাবেই হোক সমস্যার সমাধান করুন।’
খোকা বলেন, ‘একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় অবরোধ ভেঙে মানুষের যে ঢল নেমেছিল আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রীর জানাজায় এত মানুষের সমাগম হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। বিএনপির এরকম জনপ্রিয়তা দেখে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালনা হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আজ হাসিনার ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে’। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে ১৫৪টি নয়,২০৯টি আসন ছিনতাই করেছিল। কারন এরশাদের জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পরও বিজয়ী হওয়া আসনগুলো নির্বাচন কমিশন গণনায় আনেননি।
তিনি বলেন, একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি আরাফাত রহমান কোকো’র জানাজায় অবরোধ ভেঙ্গে মানুষের যে ঢল নেমেছিল আওয়ামীলীগের কোন মন্ত্রীর জানাজায় এত মানুষের সমাগম হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। বিএনপির এরকম জনপ্রিয়তা দেখে সরকার আতংকিত হয়ে পড়েছে। ঢকার সাবেক মেয়র খোকা আরও বলেন, বাংলাদেশ জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালনা হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আজ হাসিনার ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রায় একটি কথা বলে থাকেন যে,খালেদা জিয়া নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছেন, দেশের মানুষ সেই ভুলের খেসারত কেন দেবে? খালেদা জিয়া প্রহসনের নির্বাচনে না গিয়ে কোন ভুল করেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ক্ষমতায় থেকে কখনও নির্বাচন হয় না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন তাঁরা ছিনতাই করে নিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে গেলেও এমন হতো। তাই নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্তে কোন ভুল হয়নি।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব মুসফিকুল ফজল আনসারী বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার দিন কোকোর মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তারেক রহমানের কাছে। দীর্ঘদিন কাছে না থাকা ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের হাহাকার দেখে তিনি নির্বাক হয়েছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ন সরকার এতটা নির্দয় ও পাশবিক হতে পারে তা কল্পনারও বাইরে। হাসিনা সরকারের মন্ত্রীরা কতটা বেহায়া ও নিলর্জ্ব তা দেখেছি লুঙ্গি পড়ে রাজপথে নেমে তাঁরা বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছে। কোকোর মৃত্যুতে শেখ হাসিনা সমবেদনার নামে নাটক করেছেন। একদিকে বিদ্যুৎ , টেলিফোন লাইন বিচ্ছন্ন করেছেন, অন্যদিকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। এটা একটা নাটক ছাড়া কিছু নয়। একটি সভ্য দেশে মন্ত্রীদের এমন আচরন মূর্খতার বহিপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন,উইপোকার যেমন পাখা গঁজায় মরিবার তরে তাই হাসিনারও পাখা গঁজিয়েছে মরার জন্য। দেশের চলমান আন্দোলনে তাঁর অস্তিত্ব দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে এখন শেষ কামড় মারছে। দেশের মানুষের কথা চিন্তা না করে ক্ষমতার মোহে পাগল হাসিনা আজ তাঁর বাপের মতই বাকশালী কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন অচিরেই ধুলিস্যাত হয়ে যাবে। সেইদিন আর বেশি দূরে নয়। দেশের মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন,অন্ধকারের পরেই ভোরের স্নিগ্ধ আলো যেমন মানুষ দেখতে পায়, আন্দোলনের পর তেমনিভাবে দেশের মানুষও আগামীতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে পাবে। পৃথিবীতে কোন আন্দোলনই বৃথা যায়নি, বিএনপির বর্তমান আন্দোলনও বৃথা যাবে না। এ আন্দোলনে আমরা সফল হবোই। আর একটু ধৈর্য ধরে এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা সেই কাংখিত স্নিগ্ধ আলোর মুখ দেখতে পাবো।
যুক্তরাষ্ট্র তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, কোন আপোস মিমাংসা করে নয়, রাজনৈতিকভাবেই শেখ হাসিনাকে বিএনপি মোকাবেলা করবে। সাহস থাকলে একবারের জন্য হলেও বেগম জিয়াকে রাজপথে নামার সুযোগ দিন। তারপর দেখবেন আন্দোলন কত প্রকার ও কি কি। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে যদি ভয় না পেয়ে থাকেন তাহলে বালু আর ইটের ট্রাক সরিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন খালেদা জিয়ার ক্ষমতা কত।
সভায় সদ্য প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা কাজী ইলিয়াস। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন স্থানীয় বায়তুল মোকারম মসজিদের ইমাম মাঈন উদ্দিন। এ ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মুসফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দু সবুর, যুক্তরাষ্ট্র তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ, নিউজার্সি বিএনপির সভাপতি সৈয়দ কাওসার আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক নির্বাহী সদস্য এবাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুল হক আহাদ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া মিল্টন, স্থানীয় বিএনপি নেতা এ আর খান লাভলু, এস এম মিন্টু, জাহেদ চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান, আলাউদ্দিন পাটোয়ারি, কাজী মতিউর রহমান, ইফতেখার হোসেন ফরহাদ, জানে আলম ও শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় উপস্থিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরন করেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মিরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক যৌথভাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিশাল আকৃতির ক্যানভাসের মোড়ক উন্মোচন করেন। শেষে অতিথিদেরকে ফিলাডেলফিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘লিবার্টি বেল’ এর প্রতিক সম্বলিত ক্রেষ্ট উপহার দেওয়া হয়।