বাংলাদেশে ৭০ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২২:৫৩,অপরাহ্ন ০১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: দেশের ৪০ শতাংশ শিশু কম ওজন ও অপুষ্টিতে ভুগছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অনেক সূচকেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে শিশুর অপুষ্টি ও ওজনহীনতার চিত্র কাঙ্ক্ষিত নয় বলে মনে করছে সরকার। মা ও শিশুপুষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক মানচিত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশের অপুষ্টি মানচিত্রের হিসেবে, সিলেটেই অপুষ্টিজনিত কারণে খর্বাকৃতি ও কম ওজনের শিশু বেশি। এর পরের অবস্থান চট্টগ্রামের।
গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। চাইল্ড অ্যান্ড মাদার নিউট্রিশন সার্ভের (সিএমএনএস) ফলাফলের ভিত্তিতে অপুষ্টি সংক্রান্ত বিষয় এ মানচিত্রে উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংক ও বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শিশু ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ, রংপুরে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ, বরিশালে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ঢাকায় ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ ও খুলনায় ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে সচ্ছল অঞ্চলও পুষ্টি জোগানে পিছিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ানো, অসচেতনতা, দুর্গম এলাকা ও অপ্রতুল স্বাস্থ্য সেবা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ কম থাকায় আর্থিক দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে থাকার পরও অপুষ্টিতে ভুগছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা।
অপুষ্টি মানচিত্রে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এতে দারিদ্র্য ব্যাপক কমেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে, জন্মহার ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। এসব সূচকের উন্নতি সত্ত্বেও অপুষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, অপুষ্টিজনিত কারণে অর্থমূল্যে প্রতিবছর বাংলাদেশকে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি উৎপাদনশীলতা হারাতে হচ্ছে; যা স্বাস্থ্যের পেছনে মোট ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি।
অপুষ্টির কারণে খর্বাকৃতির শিশু সর্বোচ্চ সিলেট বিভাগে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপরই চট্টগ্রামে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৪ শতাংশ, রংপুরে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, খুলনায় ৩২ শতাংশ, ঢাকায় ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ ও বরিশালে ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
জেলার দিক দিয়ে অপুষ্টিজনিত কারণে খর্বাকৃতির শিশুর হার সবচেয়ে বেশি বান্দরবান জেলায়, হার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ। পাশাপাশি কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকা জেলা, হার ২২ দশমিক ৮ শতাংশ।
মানচিত্র অনুযায়ী, খর্বাকৃতি শিশুর ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে ভোলা, হার ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন ঝালকাঠি ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ বান্দরবান, হার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন চাঁদপুর ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ কিশোরগঞ্জ, হার ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সর্বনিম্ন ঢাকা ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ কুষ্টিয়া, হার ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন নড়াইল ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে সর্বোচ্চ সিরাজগঞ্জ, হার ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বনিম্ন জয়পুরহাট ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ নীলফামারী, হার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বনিম্ন পঞ্চগড় ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ সুনামগঞ্জ, হার ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বনিম্ন মৌলভীবাজার ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
মানচিত্র অনুযায়ী, কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে ভোলা, হার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বনিম্ন ঝালকাঠি ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ লক্ষ্মীপুর, ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন রাঙ্গামাটি ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ নেত্রকোনা, হার ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বনিম্ন ঢাকা ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ চুয়াডাঙ্গা, ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বনিম্ন খুলনা ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে সর্বোচ্চ সিরাজগঞ্জ, ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন জয়পুরহাট ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ কুড়িগ্রাম ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন দিনাজপুর ৩৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ সুনামগঞ্জ, হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন মৌলভীবাজার ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম। বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল এতে সভাপতিত্ব করেন।