বন্ধ ক্যাম্পাসে ভাইভা : বিপাকে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৪:৩৫,অপরাহ্ন ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪
শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক :: বাস চাপায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় ২ ডিসেম্বর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করায় ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছে ভর্তিচ্ছুকরা। তবে হল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছে দূরদুরন্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। সন্তানদের নিরপত্তা নিয়ে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তৌহিদুর রহমান টিটু নামে এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুসে উঠে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের অন্তত: ৩০টি গাড়ি ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। ভিসি বাংলো, প্রশাসন ভবনসহ প্রায় সব ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৪ ডিসেম্বর ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের সভাপতিত্বে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল ইউনিটের সক্ষাৎকার গ্রহণ আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১১ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। এর আগে ৭ ডিসেম্বর থেকে সাক্ষাৎকারের তারিখ ছিল।
এর মধ্যে দূরদূরন্ত অনেক শিক্ষার্থী এসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। ক্যাম্পাসের আশে পাশে কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় অনেকে টানাপোড়েন মধ্যদিয়ে ফিরে গেছে।
হল বন্ধ, বহিরাগতদের অপতৎপরতা, বারবার সাক্ষাৎকারের তারিখ পরিবর্তনে চরম বিপাকে পড়ার আকাঙ্খা করছে ভর্তিচ্ছুরা। বগুড়া থেকে সাক্ষাৎকার দিতে আসা তামান্না বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর ‘বি’ ইউনিটে ভাইভা থাকায় আমরা ৬ তারিখে এসেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে আমার বান্ধবীরা চলে গেছে। আমি কুষ্টিয়ায় আমার মামার বাসায় আছি।’
সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণার পর থেকে বন্ধ ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের আনাগোনা লক্ষ করা যাছে। এটা তাদের জন্য একটি মক্ষোম সুযোগ বলে আনেকেই মনে করছেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত তিন বছরে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী সাক্ষাৎকার দিতে এসে হয়রানির শিকার হয়েছে। মূল কাগজপত্র ছিনেয়ে নিয়ে টাকা আদায়, নিজেদের প্রার্থীকে ভর্তি করতে দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের গুম করার ঘটনাও ঘটিয়েছে বহিরাগত ও ছাত্রলীগ নেতারা। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে এইচ ইউনিটের সাক্ষাৎকারের সময় নিজের প্রর্থীকে ভর্তি করাতে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির এক সনিযর নেতা এক ছাত্রকে গুম করতে গিয়ে ধরা পড়ে। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এই পরিস্থিতিতে বন্ধ ক্যাম্পাসে সাক্ষাৎকারের তারিখ শুনে সন্তাদের নিরপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনেক অভিভাবক। লালমনিরহাট থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফোনে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে ভাইভা গ্রহনের সিদ্ধান্ত হটকারী মূলক। তারা যেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে অক্ষম হয়ে হল বন্ধ করেছে, সেখানে ভর্তিচ্ছুকদের নিরাপত্তা কিভাবে দিবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল না করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে চক্রান্ত মূলক বলে আক্ষা দিয়েছেন। একাধিক সিনিয়র শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আঞ্চলিক ক্যাম্পাসে পরিণত করতে প্রশাসনের একাংশ উঠে পড়ে লেগেছে।’
প্রক্টর প্রফেসর ড. ত.ম.লোকমান হাকিম বলেন, ‘ভর্তিচ্ছুরা যেন কোন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছি।’
বিশ্ববদ্যিালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন,‘ আগামীকাল(মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিটিং আছে। আশা করছি দুরদূরন্ত থেকে আশা ভর্তিচ্ছুরদেরদ কথা ভেবে সেখান থেকে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’