বছরের শুরুতেই উৎসবের মধ্য দিয়ে ৪৪ কোটি বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৭:৩৭,অপরাহ্ন ২৭ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
কেবল দেশের ক্ষেত্রেই নয়, সারাবিশ্বের কাছেই ২০১৪ সালে এ ছিলো এক অন্যরকমের উৎসব। নতুন শিক্ষা বর্ষের শুরুতেই খালি হাতে স্কুলে গিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শামিল হয়ে পুরো একসেট ঝকঝকে নতুন বই হাতে পেয়ে মহা খুশি ছিলো শিক্ষার্থীরা।বছরের শুরুতেই রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের স্কুলে স্কুলে প্রায় ৩১ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের বিশাল কর্মযজ্ঞ ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০১৪’ র সফল গল্প ছিলো এটি । সেসময় দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী অন্যরকম এক উৎসরের মধ্য দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয় বিনামূল্যের ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার ৫২৬টি বই ও শিক্ষা উপকরণ। বছরের শুরুতে সঠিক সময়ে বিনামূল্যে নতুন বই হাতে পেয়ে উৎফুল্ল ছিলো সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা। খুশি ছিলো অভিভাবকরাও।
এবারও ২০১৫ সালেও একই ধারাবাহিকতায় নতুন বছরের প্রথম দিনই প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের বোর্ডের পাঠ্যবই দেওয়া সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্ভরযোগ্য সুত্র । ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সব উপজেলাতেই কম-বেশি পাঠ্যবই পৌঁছে গেছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যবই বিতরণ উদ্বোধন করবেন। আর পরদিন ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উত্সবের মধ্য দিয়ে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৪৪ কোটি বই স্কুলে ভর্তি হওয়া সব শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ এমন আশার কথাই জানিয়েছে।
অন্যদিকে এই আশার মধ্যে শুধু প্রাক প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির বইগুলো জানুয়ারির মাঝামাঝির আগে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া প্রাথমিকের প্রায় ২০ ভাগ বই যথাসময়ে না পৌঁছানোর আশঙ্কা করছেন পাঠ্যবই ছাপানোর ছাপাখানার মালিকরা। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তোফায়েল খান জানান, তাদের হিসাবে গতকাল পর্যন্ত প্রাথমিকের ৬০ ভাগ এবং মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ির প্রায় ৮০ ভাগ পাঠ্যবই সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিক বাদে অন্যান্য পর্যায়ের সব বই ডিসেম্বরের মধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে চলে যাবে। কিন্তু প্রাথমিকের প্রায় ২০ ভাগ বই এই সময়ের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নুজহাত ইয়াসমিন এমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিকের প্রায় ৩৩ লাখ বই একটি প্রতিষ্ঠানকে কিছু সময় পরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারা মাধ্যমিকের বই আগেই ছাপার কাজ শুরু করায় প্রাথমিকের বইগুলো প্রথমে ধরতে পারেনি। তবে এখন কোনো সমস্যা নেই। তারা ইতোমধ্যেই প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই উপজেলা পর্যায়ে চলে যাবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে এখন থেকেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই নিয়ে যেতে পারবে। তবে শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি থেকে বই পাবে।
প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের বিষয়ে তিনি জানান, শিশু শ্রেণির প্রায় ৫৫ লাখ বই ছাপাতে একটু দেরি হবে। এসব বই জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। তবে এতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এই শ্রেণির শিশুরা ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। মোট ৯৫টি প্যাকেজে ২০টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ করছে। এর মধ্যে ভারতের কৃষ্ণা টেড্রার্স নামে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ৯০ লাখ বই ছাপানোর কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চালানের ৩২ লাখ বই গত ১৮ নভেম্বর দেশে এসেছে।