বছরের প্রথম সপ্তাহে আসছে ৭২ ঘণ্টার হরতাল!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০২:২০,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একবছর পূর্তিতে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বড় একটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবি, গুম-খুন-অপহরণ ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার দাবিতে ৩ অথবা ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে চায় ২০ দলীয় জোট।
জানা গেছে, সমাবেশ করতে না দিলে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোট। এই ইস্যুতে সরকার পতনের লাগাতার আন্দোলনও শুরু হতে পারে। এ জন্য ৩ ও ৫ জানুয়ারি সমাবেশের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কিংবা মতিঝিলের শাপলা চত্বরের যে কোনো একটি স্থানে অনুমতি চেয়ে ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে লিখিত আবেদন করেছে বিএনপি।
এই জন্য তারা বিভিন্ন দিকে যোগাযোগও করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে এমন কোনো আভাস মেলেনি। কারণ সরকার থেকে পুলিশকে এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত অনুমতি দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। এই কারণে মহানগর পুলিশও তাদেরকে অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছে না। এছাড়াও সংশ্লিষ্টরাও কেউ অনুমতি দেয়ার পক্ষে নয়। আর এটা আঁচ করতে পারছে বিএনপি।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএনপির আবেদন তারা পেয়েছেন। তবে অনুমতি দেয়া না দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা প্রতিদিন ডটকমকে বলেন, সরকার জনগণকে জমায়েত হতে দেখলেই ভয় পায়। ঢাকায়ও সমাবেশের অনুমতি না দিলে জনগণই এর জবাব দেবে।
এদিকে বিএনপি যে তিনটি স্থলে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে তার মধ্যে একটি স্থানে অর্থাৎ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি সরকারি দল আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিজয় দিবস হিসাবে দিনটি পালন করে বিশাল মিলনমেলা করবে। সেখানে তারা আনন্দ সমাবেশ করবে। সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গাজীপুরের পর এবার ঢাকায়ও সমাবেশের অনুমতি এখনো পায়নি ২০ দলীয় জোট। আগামী ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের জন্য দলটি পুলিশের অনুমতি চাইলেও শেষপর্যন্ত তাতে ‘না’ জবাব-ই মিলবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ঢাকায়ও সমাবেশের অনুমতি না পেলে মাঝখানে বিরতি দিয়ে সারাদেশে দুই দফায় কয়েকদিনের হরতাল দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। হরতালের পাশাপাশি আর কী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে, এখন সেই চিন্তা-ভাবনাও চলছে দলের ভেতরে।
সরকার পতনে হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগ লাগাতার আন্দোলন হতে পারে। এছাড়া ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনাও নেয়া হতে পারে। বিশেষ করে সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির আগেই কঠোর কর্মসূচি নিয়ে সরকারপতনের আন্দোলনে রাজপথে নামছে বিএনপি। ইতিমধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যে কোনো সময়ে আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সূত্রটি জানায়, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আগামীদিনের আন্দোলন কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। যাতে করে আন্দোলনকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া যায়। আর তাই অসহযোগ আন্দোলনে যাবার পরিকল্পনায় কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এমনকি আগামীদিনে যেখানেই বাধা দেয়া হবে সেখানেই গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা নীতিকে যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করতে রাজপথে আন্দোলনের নেতৃত্বে মাঠে থাকবেন খালেদা জিয়া। আন্দোলন কর্মসূচির রূপরেখা প্রস্তুত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন বলেও জানা গেছে।
ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে এক আলোচনা সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত। আজকে সেই বিদ্রোহ সংগঠিত করার সময় এসেছে। তাই বিজয়ের মাসেই সেই প্রস্তুতি সর্ম্পূণ করতে হবে। আলোচনার জন্য বসে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই।
সম্প্রতি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গুলি করা বাদ দেন, সাহস থাকলে রাজপথে মোকাবেলা করেন। আমরা বাংলাদেশে ভেসে আসি নাই। আগামীদিন বাংলাদেশের কোথাও আন্দোলন না হলেও নগর বিএনপির নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাকার রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে বুকের তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, রাজধানীতে আন্দোলন সফল করতে এবার এককভাবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না। এমনকি ঢাকাকে আন্দোলনের জন্য ভাগ করা নাও হতে পারে। স্বল্প সময়ের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার কিছুটা আভাস ঢাকা মহানগর ও দলের প্রতিটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসাবে গোটা দেশের মানুষের সামনে এর গুরুত্ব তুলে ধরে এবং এর প্রতিবাদে রাজপথে সরকারের বিরুদ্ধে নামার জন্য ডাক দিতেই একটি সামবেশ করতে চাই ৫ জানুয়ারি। কিন্তু সরকার আগেভাগেই সেই রকম ধারণা করে আমাদেরকে সমাবেশ করতে দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরাও সেই রকমই আভাস দিচ্ছেন। এতে করেই প্রমাণ হয় যে, দেশে আজ কতটা স্বৈরাচারি সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সরকার সমাবেশ করতে না দিলে হরতাল দেয়া হতেও পারে।