ফেসবুক বা মেইলে হয়রানির শিকার হলে যা করবেন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৫:১৭,অপরাহ্ন ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক: রীনা দেশের নামকরা একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে তার পরিচিত কেউ একজন তার নাম, পরিচয় ও ছবি দিয়ে একটা ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে আসছিলেন এবং বিভিন্ন জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যান।
কিন্তু বাস্তবে তার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। পরে তার নামে চালিত ভুয়া আইডি থেকে তার পরিচিত অন্য একজনের সাথে একটি আর্থিক লেনদেনে কেলেঙ্কারি হলে তিনি এই বিষয়ে প্রথম অবগত হন। সাথে সাথে তিনি বিষয়টি অবগত হয়ে থানায় একটি জিডি করেন।
সময়টাই যখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ তখন একে ঘিরে চলছে নানা রকম ঘটনা দুর্ঘটনা। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ যেমন তার জীবন যাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে তেমনি এর অপব্যবহারের ফলও কিন্তু কম নয়।
এর একটি নমুনা হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, মেইল বা ব্লগে কাউকে হয়রানি করা কিংবা প্রতারণা করা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এখন প্রায় সকলের কাছে জনপ্রিয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই এর বেশি শিকার হচ্ছে। ভাবছেন এর কি কোনো প্রতিকার নেই? হ্যাঁ আছে।
২০০৬ সালের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে :
– যা মিথ্যা ও অশ্লীল;
– কেউ তা পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে পারে;
– যার দ্বারা মানহানি ঘটে,
– আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে,
– রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়,
– কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে,
এমন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হলে তিনি সর্বোচ্চ চৌদ্দ বৎসর এবং কমপক্ষে সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এবং সেই সাথে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে৷(ধারা ৫৭এর উপধারা-১)
আবার এই দিকে ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কেউ যদি কারো নামে ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে প্রকৃত ব্যবহারকারীকে বিব্রত বা হয়রানি করে এবং এতে যদি কারো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পেশাগত ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন তাহলে সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী প্রয়োজনে থানায় জিডি করতে পারবেন কোনো ফি ছাড়াই।
তবে নিজেই জিডির আবেদন লিখবেন। প্রয়োজনে নিকটস্থ থানার পুলিশের সাহায্য নিবেন। জিডি করে রাখা ভাল কারণ এইসব করে আপনার নামে কেউ কোনো অপরাধ করলেও তার জন্য পরবর্তীতে আপনি দায়ী হবেন না।
আপনার সমস্যা যদি গুরতর হয় তাহলে আপনি উপরে উল্লিখিত আইনে মামলাও করতে পারেন। আর প্রমাণস্বরূপ স্ক্রিন শট নিবেন ও সংশ্লিষ্ট পেজ সেভ করে রাখবেন। এসব পরবর্তীতে আপনার অভিযোগের ভিতটা অনেক শক্ত করবে।
যাহোক আমরা অনেকে এইসব আইন ও নিয়ম সম্পর্কে জানি না বা জেনেও আইনের আশ্রয় নেই না বলে এসব অপরাধ ও অপরাধীকে দমানো কঠিন হচ্ছে আর দিন দিন তারা মাথা চড়া দিয়ে উঠছে।