প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসের পরাজয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৫:৫৯,অপরাহ্ন ০৯ জানুয়ারি ২০১৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন ত্যাগ করেছেন মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। তিনি এ নির্বাচনের আগে ১০ বছর দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দেশটির বিরোধী জোট ইউএনপি প্রার্থী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার। শুক্রবার সকালে শ্রীলঙ্কার নির্বাচন দপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩২ লাখ ২৬ হাজার ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে সিরিসেনা ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং রাজাপাকসে ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে নিবন্ধিত মোট ভোটার ছিল দেড় কোটির মতো। জানা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দু’জন- এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে (৬৯) ও সদ্য দলত্যাগী নেতা মাইথ্রিপালা সিরিসেনা (৬৩)।
এদিকে রাজাপাকসের প্রেস অফিসার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি সম্মান জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এরইমধ্যে রাজাপাকসে তার সরকারি বাসভবন ছেড়ে গেছেন এবং আজ শুক্রবার দিনের শেষভাগে নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটের ফল আসার পর রাজাপাকসের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কোনো ভালো খবর নেই। সব খারাপ খবর। আমি মনে করি জনগণের পরিবর্তন দরকার এবং এটাই গণতন্ত্র।
আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ভোট দেয় শ্রীলংকানরা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। আগের নির্বাচনগুলো বর্জন করা তামিলরাও এবার দলবেঁধে ভোট দিয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০০৫ সালে রাজাপাকসে ক্ষমতায় আসার ৪ বছরের মাথায় শ্রীলঙ্কায় এক সেনা অভিযানে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের পরাজিত করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে ২৬ বছর ধরে চলা সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান করায় সৃষ্ট জনপ্রিয়তায় ভর করে ২০১০ সালে ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রাজাপাকসে। জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়লেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার মতো কোনো উপযুক্ত প্রার্থী দিতে পারবে না বিরোধীদল, এ বিবেচনায় মেয়াদ শেষের ২ বছর আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেন রাজাপাকসে। তবে সিরিসেনার উত্থানের কথা ঘূণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি তিনি। অক্টোবরেও রাজাপাকসের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন সিরিসেনা। এছাড়া তিনি ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দেশকে স্বৈরতন্ত্রের পথে চালিত করা ও পরিবারতন্ত্র কায়েমের অভিযোগ তুলে নভেম্বরে রাজাপাকসের পক্ষত্যাগ করেন তিনি। তারপর ক্ষমতাসীন দল ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়। পরে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট সিরিসেনাকে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে। এতে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেহারা আমূল পাল্টে যায়।