প্রেষণে বদলি আতঙ্কে দুদক কর্মকর্তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৭:৪২,অপরাহ্ন ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: প্রেষণে বদলি আতঙ্কে রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে বদলি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দুদকের নিরীহ কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ইতোমধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দুদকের দুই কর্মকর্তা পরিচালক এবিএম মাহবুব এবং উপ-পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে প্রেষণে বদলি করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’র রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবিএম মাহবুবকে। আর খান মোঃ মীজানুল ইসলামকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএস) ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রান্সজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’র ম্যানেজার (লিগ্যাল এফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) পদে বদলি করা হয়।
এছাড়া প্রেষণে বদলির লক্ষ্যে আরো ৮ কর্মকর্তার একটি তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জমার বিষয়টি জনাজানির পর দুদক কর্মকর্তাদের মাঝে প্রচন্ড আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ৮ জনের তালিকা জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট। তারা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি’র রোডমার্চে যোগ দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে। ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চার বিভাগীয় শহর অভিমুখে এসব লংমার্চ হয়।
দুদকের নিয়োগ ও চাকরি বিধিতে প্রেষণে অন্যত্র বদলির বিধান থাকলেও একদশকে এই প্রথম কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে অন্যত্র পাঠানো হলো। দুদকে জনবল সংকটের প্রেক্ষাপটে ইতিপূর্বের কমিশনগুলো প্রেষণে বদলির প্রস্তাব অনুমোদন করেনি।
সূত্র মতে, সরকারি চাকরি বিধিতে প্রেষণে বদলি সাধারণ ঘটনা হলেও দুদক কর্মকর্তাদের প্রেষণে বদলিকে সাদা চোখে দেখার অবকাশ নেই। বিশেষ করে আরো বেশি সংখ্যক এডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দুদকে প্রেষণে বসানোর ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যেই নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রেষণের নামে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দুদকে আরো বেশিমাত্রায় আমলাদের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এটি করা হচ্ছে। ফলে প্রেষণে বদলি দুদক কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে যতটুকুন না বেকায়দায় ফেলবে তারচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কমিশন। দুদক কর্মকর্তারা স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান, তদন্ত করতে না পারে প্রেষণে অন্যত্র ‘ডাম্পিং পোস্টিং’ সে ক্ষেত্রে ভীতি হিসেবে কাজ করবে।
আরো জানা যায়, প্রেষণে বদলিকৃত দুই কর্মকর্তার মধ্যে পরিচালক এবিএম মাহবুব সম্পর্কে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দূর সম্পর্কের ভায়রা। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের মামাতো বোন এবিএম মাহবুবের স্ত্রী রোকসানা হায়দার। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় দু’বছর আগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি।
এবিএম মাহবুবও ডায়াবেটিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত। উপ-পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম দুদকের প্রথম চেয়ারম্যান বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের ‘কাছের লোক’ এবং সাবেক চেয়ারম্যান লে: জে: (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরীর ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের বলেন, দুদককের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে প্রেষণে অন্যত্র বদলির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যারা দুদকের কর্মকান্ডে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তাদেরই অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কিছু অদক্ষ কর্মকর্তার তালিকা বিধি অনুযায়ী আমরা সরকারের হাতে তুলে দিয়েছি। রাজনৈতিকভাবে ভিক্টিমাইজ হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে কি না’-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিক্টিমাইজ হলে হোক। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, শুধু প্রেষণে বদলিই নয়-আমরা অন্যদপ্তর থেকে দক্ষ জনবলও আনবো। দুদককে আরো গতিশীল ও বাস্তব সম্মত করতেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।