প্রবাসীদের স্বপ্ন পূরণ :: ওসমানী বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং প্রকল্প সম্পন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৫:২০,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: অবশেষে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেশনটির উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টেশনটি চালুর লক্ষে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষ-নিরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নবীগঞ্জ সফরের দিন তা উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি জানিয়েছেন, রিফুয়েলিং স্টেশনের নিমার্ণ কাজ শেষ হলে বিমানের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে।
গত ৫ নভেম্বর বুধবার যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের এম্পায়ার ব্যান্কুয়েটিং হলে আয়োজিত অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান। মন্ত্রী জানান আগামী জানুয়ারি থেকে পূর্ণাঙ্গরুপে বিমানের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফাইট চালু হবে।
ওসমানী বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং সিস্টেম না থাকায় নির্দিষ্ট বিমান ছাড়া অন্য দেশ ও সংস্থার বিমান উঠানামা করতে পারছে না। রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু হলে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবী পূরণ হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওসমানী বিমান বন্দরে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে বিমানের ‘কনস্ট্রাকসন এভিয়েশন রিফুয়েলিং ফেসিলিটিজ’ (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থা) নামে সিলেটে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মানের কাজ শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনকন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রায় ৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি।
২০১৩ সলের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার কথা ছিলো। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় অতিরিক্ত ২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন সহকারী ব্যবস্থাপক জানান, রিফুয়েলিং স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি জানান, দু’টি স্থানে চলছে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এর একটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় পদ্মা ওয়েলের ডিপোতে এবং অন্যটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে। দক্ষিণ সুরমায় এক একর জায়গায় নির্মিত হয়েছে রিফুয়েলিং স্টেশনের রিজার্ভ স্টেশন। এর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ সুরমায় রিজার্ভ স্টেশনে নির্মান করা হয়েছে দুই তলা অফিস ভবন, তিনটি স্টোরেজ ট্যাংঙ্ক, পাইপ লাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেস্ট হাউজ, গ্যারেজ , অফিসার্স রুম ও স্টাফ রুম এবং দুটি ডিসপেনসার ও ফিল্টারিং ব্যবস্থা। অন্যদিকে বিমানবন্দরে নির্মিত হয়েছে তিনটি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, হাইড্রেন্ট লাইন, ডিপো রিফুয়েলার ডিসপেনসার ও ফিল্টার এবং জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ব্রিজার অর্থাৎ বড় ট্যাঙ্ক লরি।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. হাফিজ আহমদ বলেন, রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ করছে পদ্মা ওয়েল। নির্মান কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলে জেনেছি। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও শুধুমাত্র রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায় সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফাইট বন্ধ ছিল। রিফুয়েলিং সুবিধা হয়ে গেলে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাবে এ বিমানবন্দর।
১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ওসমানী বিমান্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পর চালু হয় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। প্রথম দিকে বেশকিছু দিন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হলেও সিলেটে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় অল্পদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সরাসরি ফ্লাইট। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েন বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটের প্রবাসীরা। এছাড়া এই অঞ্চলের রপ্তানি বাণিজ্যও বাধাগ্রস্থ হয়।
২০০১ সালে আবার বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। উন্নয়নকাজ শেষে ২০০৬ সালের ১২ মার্চ দুবাই থেকে আসা একটি এয়ারবাস (বিজি ০২০) অবতরণের মাধ্যমে ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে আবার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার বিদেশী ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস (ডিসি-১০)। এর মাধ্যমে সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সব সম্ভাবনা দেখা দেয়। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুয়াশার অজুহাতে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হয়। ৩ মাস পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমেছিলো বোয়িং ৭৭৭ ‘পালকি’।
উল্লেখ্য একই সময়ে এধরণের রিফুয়েলিং প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রায় ২ বছর আগে নির্মান কাজ শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের।