প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় মজিনা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৬:৪৬,অপরাহ্ন ২০ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা কূটনৈতিক দায়িত্ব শেষে ফিরে যাচ্ছেন নিজ দেশে। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। না পেলে ম্লান মুখ নিয়েই হয়তো দেশে ফিরবেন ড্যান মজিনা।
বাংলাদেশে প্রায় ৩ বছর কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনশেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। কূটনৈতিক রেওয়াজ মতে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ চেয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। কাছাকাছি সময়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকেও জানানো হয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফেও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে ওই কূটনৈতিকপত্র পাঠিয়ে উভয়ের সুবিধাজনক সময়ে সাক্ষাতের অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলাদেশ থেকে বিদায়ী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ পেয়েছেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। পরদিন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ এবং গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ সেরেছেন। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গে ড্যান মজিনা বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া প্রত্যাশিত সব সাক্ষাৎ এরই মধ্যে তিনি শেষ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ উল্লেখ করে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। নির্ধারিত সময়ে চলে যাচ্ছেন নিশ্চিত করে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করেছেন তিনি। পররাষ্ট্র দপ্তর ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা অপেক্ষায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ক্ষণ পেতে। কিন্তু এখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই বলা হয়নি। কূটনৈতিক মহলের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদায়ী সাক্ষাৎ না পেলে অনেকটা ম্লান মুখেই হয়তো দেশে ফিরবেন মজিনা।
জানা গেছে, প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পরবর্তীতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যেই পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল প্রধানমন্ত্রী তাকে সময় দেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে যে খবর পাওয়া গেছে তাতে সাক্ষাতের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হলেও সরকারের নানা ইস্যুতে টানাপড়েন চলছেই। এর মধ্যেও ড্যান মজিনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছিলেন। সর্বশেষ গেল বছরের নভেম্বরে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের প্রথম ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন। এর আগে পরে বহুবার চেষ্টা ড্যান মজিনা একান্ত সাক্ষাতের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে সময় দেয়া হয়নি।
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার মধ্য দিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড্যান মজিনা। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অংশীদারী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। একই সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফরের বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
বাংলাদেশে তিনি ১২২ দিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে হিলারি ক্লিনটনের সফর সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অংশীদারী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এখন নিয়মিত অংশীদারীত্ব সংলাপ হচ্ছে। ড্যান মজিনা ঢাকা মিশন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ হোক বা না হোক- ঢাকার কার্যক্রমে ‘সন্তুষ্টি’ নিয়েই আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে উঠছেন তিনি।