‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সংকটকে গভীর ও উপসংহারহীন করে তুলবে’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৯:৪১,অপরাহ্ন ২৯ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
‘যে কোনো উপায়ে দমন করুন, দায়িত্ব আমার’ গতকাল পুলিশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই বক্তব্য সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বর্তমান সংকটকে আরো গভীর ও উপসংহারহীন করে তুলবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, যে কোনো উপায়ের পরিণতি কী তাহলে আরো অনেক লাশ খালে-বিলে-নদীতে ভেসে উঠবে? যৌথবাহিনী কর্তৃক চলবে গ্রামের পর গ্রামে খান্ডব দাহন, বিরোধীদলের আরো অসংখ্য নেতা-কর্মীদের হত্যার পর বলা হবে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী?
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিরোধী দলের অস্তিত্ব রেখে কখনোই নাৎসী শাসন বজায় রাখা যায় না। তাই বাংলাদেশি নাজীরা বিরোধী দল, বিরোধী মত, সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার যা সংবিধান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে স্বীকৃত-সেটিকে উচ্ছেদ করার চুড়ান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এজন্য জনমনকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদেরকে হাইপার প্রপাগান্ডার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা শুধু অমানবিকই নয়, যারা এগুলোর সাথে যুক্ত তারা পাশবিক বিবেকের অমানুষ। কিন্তু এই জঘন্য অপকর্মের দায় চাপানো হচ্ছে বিরোধীদলের ওপর। কারণ সরকারি শক্তির নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম। তাদের হুকুমেই গণমাধ্যমে ঢালাও প্রচার চালানো হচ্ছে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন সারাদেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়ে চলছে যৌথবাহিনীর তান্ডব, চলছে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা, সেই রকম ভয়-আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে নেতা-কর্মীরা জীবন বাঁচাবে না গাড়িতে আগুন অথবা পেট্রোল বোমা ছুঁড়বে?
রিজভী বলেন, দেশের জনপদের পর জনপদে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্ত লোমহর্ষক ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে অথচ গণমাধ্যম নিশ্চুপ। যদিও দু’-একটি পত্রিকা অনেক হুমকির মাঝেও কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ করছে। যেখানে বিএনপি জোট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ, মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিন্ন কণ্ঠে প্রতিবাদ করছে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে গুলি গুলি করার নির্দেশ ও বিচার বহির্ভূত হত্যার। যা সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। কিন্তু এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, গণবিচ্ছিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখলে তখন তারা গণদুশমনে পরিণত হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার জনআতঙ্কে ভুগছে। জনগণের ভীড় দেখলেই তারা প্রমাদ গুনছে। এইজন্য বিএনপি ও তাদের জোট কোনো সমাবেশের ডাক দিলেই তারা যেন বিপদের আওয়াজ শুনতে পায়। তারা জনগণকেই বিপদ মনে করে।
রিজভী আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, ঘৃণ্য স্বৈরশাসকদের পুরনো পাপের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশের বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। নিজ দেশের বিরোধী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দিয়ে, অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে অবৈধ ক্ষমতাকে আগলে রাখতে চাচ্ছে। ওরা জানে তাদের সাথে জনগণ নেই, ওদের একমাত্র ভরসা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, তাই ওই সংস্থাগুলোতে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সুতরাং রক্তমাখা লাশ আর উৎপীড়নের নানা পন্থা অবলম্বন করে চলমান আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা করে সফল হতে না পেরে এখন সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে টার্গেট করা হয়েছে।
রিজভী আহমেদ দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, মিথ্যা মামলা দায়ের করে আর আটকের হুমকি দিয়েও যেমন পুত্রশোকে কাতর বেগম জিয়াকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দৃঢ় সংকল্প থেকে বিন্দুমাত্র টলানো যায়নি, তেমনি সরকারের হুমকির বিরুদ্ধে মানুষের প্রত্যয়, দৃঢ়তা ও অঙ্গীকার আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রেখে বিজয়ের পথে ধাবিত করতে। সরকারি প্রচন্ড আক্রমণ সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা জোরালো কণ্ঠের আওয়াজে মিছিল করে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাবে।