প্রথম আলো’র কড়া সমালোচনায় ফারুকী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩২:৩৩,অপরাহ্ন ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: এবার বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর সমালোচনা করলেন দেশের গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী! নিজের ফেসবুক একাউন্টে দেশের জনপ্রিয় এই দৈনিকটিতে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, আচ্ছা, প্রথম আলোতে এডিটোরিয়াল গেট কিপিং বলে কি কিছু নাই? আজকে এক লেখায় পড়লাম প্রেসকিপশন দেয়া হচ্ছে – বাচ্চারা টিভি আর সিনেমার কল্যাণে হিন্দি ভাষা শিখলে আমাদের আখেরে লাভ হবে। ভারতে চাকরি বাকরি পেতে সুবিধা হবে। আমার খুব জানার ইচ্ছা, এই লেখকের কাছে এমন কোনো তথ্য আছে কি যার বদৌলতে আমরা জানতে পারবো ভারতে হিন্দি ভাষী বাংলাদেশীদের জন্য কি পরিমাণ চাকরি অপেক্ষা করছে ।
বা এটাও জানতে মন চায়, ভারতে চাকরি পেতে হলে কি আজকাল আর ইংরেজীতে কাজ হচ্ছে না?”
বাংলাদেশের সিনেমার চেয়ে প্রথম আলো কোলকাতা সিনেমাকে প্রাধান্য দেয়ারও কড়া সমালোচনা করেন ফারুকী; এবং প্রথম আলোর এই অবস্থানকে হীনম্মন্যতা বলে উল্লেখ করেন তার লেখায়। তিনি বলেন, কোলকাতার ছবি গুলো মহান – এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টা প্রথম আলোর এডিটোরিয়াল গেট কিপিং -এ আটকায় না । এটা স্ট্যান্ডার্ডাডাইজেশনের এক ধরনের ক্ষতিকর প্রচেষ্টা বলে মনে করছি। এই বিচার কার্য সুবিবেচনা প্রসুত মনে না হয়ে আমার কাছে এক ধরনের হীনম্মন্যতার ফল মনে হচ্ছে।’
এবার দেখার বিষয় প্রথম আলো বনাম ফারুকী যুদ্ধ কতোটা গড়ায়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তরুণ কবি সায়েদ জামিলকে জীবনানন্দ পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করায় প্রথম আলো’র ভাষারুচি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাস :
(পাঠকের জন্য হুবহু প্রকাশিত হল)
আচ্ছা, প্রথম আলোতে এডিটোরিয়াল গেট কিপিং বলে কি কিছু নাই?
আজকে এক লেখায় পড়লাম প্রেসকিপশন দেয়া হচ্ছে – বাচ্চারা টিভি আর সিনেমার কল্যাণে হিন্দি ভাষা শিখলে আমাদের আখেরে লাভ হবে। ভারতে চাকরি বাকরি পেতে সুবিধা হবে। আমার খুব জানার ইচ্ছা, এই লেখকের কাছে এমন কোনো তথ্য আছে কি যার বদৌলতে আমরা জানতে পারবো ভারতে হিন্দি ভাষী বাংলাদেশীদের জন্য কি পরিমাণ চাকরি অপেক্ষা করছে ।
বা এটাও জানতে মন চায়, ভারতে চাকরি পেতে হলে কি আজকাল আর ইংরেজীতে কাজ হচ্ছে না?
আমি তো আমার ভারতীয় বন্ধুদের সাথে ইংরেজিতেই আলাপ চালাই।
আরেকটা ভাঙা কলের গান ইনিও বাজিয়ে গেলেন হিন্দি ছবির আমদানি বিষয়ে । হিন্দির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রাদেশিক সিনেমা এগিয়ে গেছে টাইপ অর্ধ সেদ্ধ কথাবার্তা । এই কথাগুলো লেখা হচ্ছে ভারতের সিনেমা শিল্প অথবা ব্যবসার ভেতরের কথাগুলো না জেনেই । বিভিন্ন প্রদেশে মেন স্ট্রিম হিন্দির সাথে কর কাঠামোর পার্থক্য কি, স্থানীয় সিনেমার জন্য দেয়া বিশেষ সুবিধা এবং সুরক্ষা কৌশল কি, অঞ্চলভেদে নীতির ভিন্নতা কি রকম এবং কেনো- এইসব না জেনেই তোতা পাখির মতো শেখানো বুলি ছাড়া হচ্ছে । আর একই লেখায় কোলকাতার ছবির মান নিয়ে উচ্চধারণা প্রসূত মন্তব্যের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না । এটা তার ব্যক্তিগত বিচার । আরেকজনের কাছে আরেক বিচার হতে পারে। শাকিব খানের ছবির চেয়ে ভালো কোনো ছবি তার চোখে নাও পড়তে পারে । কিন্তু মুশকিল হলো “কোলকাতায় যেসব ছবি হয় তার চেয়ে শাকিব খানের ছবি ভালো “- এটা প্রথম আলো ছাপবে না । তার এডিটোরিয়াল গেট কিপিং -এ এটা বাদ পড়ে যাবে । (তার মানে আমার শুরুর কথা ভুল। তাদের আসলে তাদের মতো করে একটা গেট কিপিং সিস্টেম আছে।) কিন্ত কোলকাতার এই ছবি গুলো মহান – এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টা প্রথম আলোর এডিটোরিয়াল গেট কিপিং -এ আটকায় না । এটা স্ট্যান্ডার্ডাডাইজেশনের এক ধরনের ক্ষতিকর প্রচেষ্টা বলে মনে করছি। এই বিচার কার্য সুবিবেচনাপ্রসুত মনে না হয়ে আমার কাছে এক ধরনের হীনম্মন্যতার ফল মনে হচ্ছে । মেজর এওয়ার্ডস, ফেস্টিভাল সিলেকশন, বা মেজর রিভিউ গুলোতে আমাদের দেশে চলা এই প্রোপাগান্ডার পক্ষে সমর্থন মেলে না । সাম্প্রতিক সময়ে বরং ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চল কোলকাতার চেয়ে অনেক বেশি আলোড়ন তুলেছে। নিউ ইন্ডিয়ান ওয়েভ বলে যেটা আসি আসি করছে টপ ফেস্টিভাল প্রোগ্রামারদের ঠোঁটে বা বড় বড় আন্তর্জাতিক পত্রিকার কলমে, সেখানে আসলে কোলকাতার আসলে খুব শক্ত কোনো অবস্থান নাই। কোলকাতার অবস্থান বরং কোলকাতার চেয়েও ঢাকাতেই শক্তিশালী দেখছি, আমাদের মিডিয়ার কল্যাণে অবশ্যই ।
পরিশেষে মনে রাখা প্রয়োজন, আমি সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সিনেমার আদান প্রদানে বিশ্বাসী । তবে, আবারো বলি, সেটা হতে হবে ” স্থানীয় ছবিকে অগ্রাধিকার” দেয়ার ভিত্তিতে । যে নীতির দ্বিতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ছবি হওয়া উচিত ” A or B list ফেস্টিভালে নির্বাচিত হওয়া ছবি”। যাতে অনুরাগ কাশ্যপ বা আসিম আহলুওয়ালিয়া বা আনুপ সিং বা আনুশা রিজভী বা প্রসন্ন ভিতানাগের ছবি আমাদের এখানে আসে। আবার টপ ফেস্টিভাল ট্রাভেল করা আমাদের দেশের ছবিও যেনো কম বাধায় ওদের দেশগুলোতে যায়। আর সবচেয়ে কম সুবিধাভোগী হওয়া উচিত চেন্নাই এক্সপ্রেস এর মতো মেনস্ট্রিম স্টাফ। কারণ তাদের আসলে এই সাপোর্ট প্রাপ্যও না, প্রয়োজনও না।