‘পৌরবাসীকে জিম্মী করে রেখেছেন গোলাপগঞ্জের মেয়র পাপলু’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৬:৫৬,অপরাহ্ন ২৫ মে ২০১৫
সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী, অন্যায়ভাবে পৌরসভায় চাকুরিরত লোকজনকে চাকরিচ্যুত করা ও কর আরোপের নামে ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষের উপর অবিচারের অভিযোগ করা হয়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর বিরুদ্ধে। ‘আমরা গোলাপগঞ্জবাসী’র উদ্যোগে সোমবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পৌর এলাকার নাগরিক এম আব্দুল জলিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ের প্রথম সারির জনপদ হচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। আর এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা। অনেক আশা নিয়ে গোলাপগঞ্জের মানুষ জাকারিয়া আহমদ পাপলুর মত একজন তরুনকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি সাধারন মানুষকে মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা, অন্যায়ের প্রতিবাদ, জনগণের পক্ষে কাজ করা কিন্তু এসব থেকে বিরত থেকে তিনি নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে যাচ্ছেন। মেয়রের ঐসব অন্যায়, অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গোলাপগঞ্জ পৌরবাসীকে জিম্মী করে উপজেলা পর্যায়ের দেশের ‘ক’ শ্রেণীর যেকোন পৌরসভার চেয়ে ৮/১০ গুন বেশী হারে বাসা-বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উপর থেকে আদায় করছেন মেয়র। এক্ষেত্রে দালালদের উৎপাত মানুষকে আরো অতিষ্ট করে তুলেছে। দালালরা মেয়রের কাছের লোক হওয়ায় সাহস থাকার পরও অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারেননা। অনেক সময় দেখা গেছে বিল্ডিং বা ইমারত নির্মাণ নকশা অনুমোদনের কয়েক বছর আগের দিন তারিখ উল্লেখ করে হোল্ডিং ট্যাক্স এর চিঠি প্রেরন করা হয়। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের অজুহাতে অনেক বিল্ডিং এর গ্যাস সংযোগ প্রদানের পৌর ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছেনা। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে ছাড়পত্র দেয়ার পর কোন কারন ছাড়াই তা বাতিল করা হচ্ছে।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু গর্ব করে বিভিন্ন স্থানে বলে থাকেন তিনি গোলাপগঞ্জ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত করেছেন। সরেজমিনে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকায় গেলে দেখা যাবে ময়লা আবর্জনায় গোলাপগঞ্জ পৌরশহর ভরে গেছে। ময়লা ফেলার নির্ধারিত কোন স্থান নেই। রাস্তার পাশে দোকান ও মার্কেট গুলোর সামনে ময়লার স্তুপ জমে জন জীবনে মারাত্মক দূর্ভোগের সৃষ্টি করছে। এক্ষেত্রে পৌরসভার মেয়রের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য পৌরসভার বাহন গুলো মেয়র তার নিজের কাজে প্রায়ই ব্যবহার করতে দেখা যায়।
মেয়র পাপলুর ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে যারা মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির ৩৪ বছরের সেক্রেটারী, গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাফিজুর রহমান চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান বর্তমান কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি হেলালুজ্জ্বামান হেলাল ও তার ভাই কৈলাশ টিলা গ্যাস ফিল্ডের চাকুরিজীবী বিলাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্চাসেবকলীগের সভাপতি রুহিন আহমদ খানঁ, গোলাপগঞ্জের গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সেক্রেটারি ও সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গোলাপগঞ্জ অঞ্চলের পরিচালক আব্দুল আহাদ, পৌর এলাকার রণকেলী মহিউসসুন্নাহ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা এম আব্দুল জলিল, গোলাপগঞ্জের কবিরাজ চাদসীঁ প্রফুল্ল কুমার সরকার, গোলাপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জাবলু তালুকদার, বাঘা ইউনিয়নের নূরুল ইসলামসহ অনেকেই। মামলা দায়েরের প্রতিবাদে হাজারো মানুষ গোলাপগঞ্জ পৌর শহরে সমবেত হয়ে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেছে।
পাপলু মেয়রের অবিচারের শিকার হয়েছেন পৌরসভার হিসাব রক্ষক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী (সাহেদ), সহঃ কর আদায়কারী আব্দুল বাছিত, এমএলএসএস নজরুল ইসলাম, নৈশ্য প্রহরী আনোয়ার হোসেন। যারা চাকুরী পেয়েও মেয়রের দুর্নীতিতে সহায়তা না করায় তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেকেই ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আশায় আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম . আব্দুল জলিল বলেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু জনপ্রতিনিধি হওয়ার পূর্বে কি পরিমান সম্পদের মালিক ছিলেন আর আজ কি পরিমান সম্পদের মালিক সে বিষয় দিবালোকের মত স্পষ্ট। তিনি যখন প্রথম জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন তখন ছিলেন উপজেলার অন্যতম শীর্ষ ঋনখেলাপীদের একজন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মেয়রের কোটি কোটি টাকার সন্ধান পেয়ে তদন্ত করছে। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তার খড়কুটোর ঘর পরিনত হয়েছে আলীশান বাড়ীতে, তিনি আজ একাধিক গাড়ী ও বাড়ীর মালিক। জনগনকে হয়রানী করে বিভিন্ন প্রকার ফাদেঁ ফেলে কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি কিভাবে হয়েছেন তার প্রমান খুব শীঘ্রই “আমরা গোলাপগঞ্জবাসী” নামক এই সংগঠনটি সবার সামনে তথ্য প্রমানসহ তুলে ধরবে।
গোলাপগঞ্জ বাজারে তাহার একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল “মিডওয়ে ভিডিও ও অডিও ক্যাসেট” নামে একটি ভিডিও ক্যাসেট এর দোকান। পরবর্তীতে পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তৎসময়ে অনেক তদন্ত হয়েছে এমনকি এক পর্যায়ে তিনি জেল ও খেটেছেন। পরবর্তীতে আবার মেয়র হয়ে লাগামহীন ও বেপোরোয়া হয়ে যান। যারাই তার অপকর্মের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় তাদেরকেই তিনি কখনও নিজে বাদী হয়ে আবার কখনো তার লালিত বাহিনীকে বাদী সাজিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানী করতে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে একসময়ের কালো তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাসী জাকারিয়া আহমদ পাপলু ভাগ্য গুনে জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের প্রতি হয়রানীর প্রতিবাদ ও গোলাপগঞ্জবাসী মেয়র পাপলুর অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাসহ সকলের সহায়তা কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন, গোলাপগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাদেক আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সহ সভাপতি ফজলুল আলম, সমাজসেবী দেলোয়ার হোসেন খান, গৌস উদ্দিন চৌধুরী, আমরা গোলাপগঞ্জবাসী সংগঠনের সেক্রেটারি সায়েম আহমদ চৌধুরী, আব্দুস সালাম শিপলু, শাহিন আহমদ ও ইউসুফ আলী প্রমুখ।-বিজ্ঞপ্তি