পাকিস্তানে হামলা নিয়ে সরকারিভাবে যা বললো ভারত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৪:২৮,অপরাহ্ন ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে ভারতীয় সেনা বাহিনীর জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়ার কথা সরকারিভাবে স্বীকার করল ভারত সরকার। ওই অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পরই দিল্লিতে ভারতের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে জানান, ‘পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মহম্মদ ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সংসদ এবং ২০১৬ সালে জানুয়ারিতে পাঠানকোটে ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছিল।
জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য জাতিসংঘের তরফেও এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় জয়শের জঙ্গি ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণ শিবির চালানোর তথ্য ভারতের তরফে পাক সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে বারবারই পাক সরকার তা অস্বীকার করেছে। কিন্তু তার পরেও ভারত বারবার পাকিস্তানকে জঙ্গিদের নিরস্ত্র করতে বলে আসছে। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই সেদেশের মাটিতে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে আমাকের কাছে খবর ছিল যে জয়শ-ই-মহম্মদ ফের ভারতের মাটিতে জঙ্গি হামলা ও আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল এবং এলক্ষ্যে জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। এই বিপদের হাত থেকে বাঁচতেই ভারতের তরফে পদক্ষেপ নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। সেদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর তরফে এই প্রত্যাঘাত।’
তিনি আরও জানান, ‘মঙ্গলবার ভোরের দিকে পাক নিয়ন্ত্রিত বালাকোটে জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। এই প্রত্যাঘাতে জয়শের একাধিক সিনিয়র কমান্ডার, প্রশিক্ষক, জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। বালাকোটের এই জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি পরিচালনা করতো মাওলানা ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ ঘৌরি, তিনি জয়শ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক।’
পররাষ্ট্র সচিব পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, ‘যে কোন সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর সেই কারণেই নির্দিষ্ট ভাবে জয়শের এই জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযানে কোন সাধারণ নাগরিকের যাতে মৃত্যু নয়-সেব্যাপারটির দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছিল এবং জঙ্গলের চূড়ায় জঙ্গি ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়েছিল।’
২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে সেদেশের মাটি থেকে কোন ভারত বিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপ সংগঠিত করতে দেওয়া হবে না। আমরা আশা করবো জয়শসহ অন্য জঙ্গিদের নির্মূল করে তারা তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ১২ দিন পর মঙ্গলবার ভোরে ৩.৩০ মিনিটের দিকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরবাদ, চাকোটি, বালাকোটে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১২টি যুদ্ধ বিমান। এই অপারেশনে ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর ‘মিরাজ-২০০০’ বিমান।
ভোর ৩.৩০ মিনিট থেকে ৪.০৪ মিনিট পর্যন্ত আধা ঘন্টার অপারেশনে প্রায় ১ হাজার কিলোগ্রাম বোমা ফেলে ভারতীয় বিমানবাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় লস্কর-ই-তৈয়বা, জয়শ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন সহ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির। সূত্রে খবর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক জঙ্গি।
এদিকে বিমান বাহিনীর অভিযানের পরই দিল্লিতে জরুরি বৈঠকে বসে ভারত সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।হামলার পরই ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।
উল্লেখ্য, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়। গোটা ভারতের মানুষ কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাতে থাকে। তাদের অভিমত পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে এটাই সেরা সময়। শহিদ সেনা সদস্যের স্মরণ করতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদিও বিভিন্ন সময়ে কড়া বার্তা দিয়ে জানান, সেনা সদস্যদের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না।
এজন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সবুজ সংকেত পেয়ে সেনাবাহিনীও গোপন প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানকে পাল্টা প্রত্যাঘাতের। জঙ্গি হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, জতিসংঘ সহ একাধিক রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দেয়।
তবে এবারই প্রথম নয়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সেনার ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জওয়ানের নিহত হওয়ার পরই ২৯ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাক শাসিত কাশ্মীরে গিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।