নোয়াখালীতে ১৫ দিনে সহিংসতার বলি ৮ জন
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৭:২৮,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ২০ দলের ডাকা হরতাল অবরোধের আগুনে পুড়ছে নোয়াখালী। গত ১৫ দিনে রাজনৈতিক সহিংসতার বলিতে নিহত হয়েছেন জেলায় ছাত্রদল কর্মী, যুবলীগ নেতা, স্কুল শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, শিশুসহ অন্তত ৮ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩ শতাধিক। গ্রেফতার হয়েছেন ২শতাধিক ২০ দলের নেতাকর্মী।
মামলা করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীর নামে। হামলা, ভাঙচুর করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সংবাদপত্রের গাড়ি, পুলিশের মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন স্থাপনায়।
অবরোধ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে। সর্বত্র বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পরও সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। এক সময় নোয়াখালীকে শান্তির জেলা বলা হলেও সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা জেলাকে অশান্ত করে তুলেছে।
অপরদিকে, প্রশাসন হরতাল অবরোধে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের দমনে ব্যস্ত থাকায় বেড়ে গেছে অসামাজিক কার্যকলাপ। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের বাইরেও চলতি বছরের গত ১৫ দিনে জেলায় ৪টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের সহজলভ্যতার ঘটনাও। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার কারণে মামলা হামলার শিকার হয়ে ২০ দলের নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হওয়ার পর পুলিশ নিরাপরাধ অনেক ব্যক্তির নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বিশেষ করে উপজেলার গয়েজপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক লিটন ও ছুটি নিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত মাকে দেখতে আসা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী হাজীপুর গ্রামের আবুল কালামের পুত্র আজিজুর রহমান বাবুলকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানোয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। যেখানে পুলিশ জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা সেখানে বেগমগঞ্জের পুলিশ জনগণের শত্রুতে পরিণত হচ্ছে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি আইনুল হক সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করলেও তার কিছুই করার নেই বলে জানান।
এমতাবস্থায় সমাজের সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আশা করেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি রাত ১১ টার দিকে অবরোধে পিকেটিং শেষে সোনাইমুড়ী উপজেলার আবিরপাড়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোনাপুর তিনতেড়ি এলাকায় ছাত্রদল কর্মী মোরশেদ আলম পারভেজকে গুলি করে হত্যা করে একই এলাকার যুবলীগ ক্যাডার জাকের। নিহত পারভেজ সোনাপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের কামলা বাড়ির জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র।
গত ১২ জানুয়ারি রাতে সাড়ে ১১ টায় নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর পৌর কল্যাণ স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে পিকেটারদের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে চালক জমির উদ্দিন(২৫) মারা যান। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র।
বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে অবরোধকারীদের ছোড়া কাঠের আঘাতে আহত ট্রাক হেলপার আতিকুর রহমান (২২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ১২ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আতিকুর রহমান ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার বামর গ্রামের আব্দুল গনির পুত্র।
গত ৭ জানুয়ারি আতিকুর রহমান ঘোড়াশাল থেকে সিমেন্ট ভর্তি ট্রাক নিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে আসেন। বিকাল ৩ তার দিকে অবরোধকারীরা ট্রাকটি ভাঙচুর করে। এ সময় আতিকুরের মাথায় অবরোধকারীদের ছোড়া কাঠের আঘাত লাগে। প্রথমে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ৮ জানুয়ারি তাকে ঢামেক হাসপাতালে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত ৮ জানুয়ারি রাতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অবরোধ বিরোধী মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পাথে নোয়াখালী সীমান্তে অবরোধকারীদের হামলায় নিহত হন যুবলীগ কর্মী মো.ইউছুফ আলী (৩৫)। নিহত মো.ইউসুফ আলী নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের আন্ডারচর গ্রামের মৃত আবদুল হাসিমের পুত্র ও আন্ডারচর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে অবরোধকারী-পুলিশ-বিজিবি ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশ-বিজিবির গুলিতে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান রুবেল ও শ্রমিক মহিন উদ্দিন মহসিন নিহত হন। নিহত রুবেল সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ব্যবসায়ী তোফায়েল আহম্মদের পুত্র ও মহসিন বেগমগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের খুরশিদ মিয়ার পুত্র।
এ সময় পদলিত হয়ে ১২ বছরের এক শিশু চৌমুহনীর ওয়ান ব্যাংকের সামনে নিহত হয়।
এদিকে, নিহত শ্রমিক মহসিনকে জামায়াত কর্মী ও ব্যবসায়ী রুবেলকে যুবদল কর্মী দাবি করে পরের দিন ২০ দল নোয়াখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে।
এরআগে গতবছরের ২৯ ডিসেম্বর ২০ দলের ডাকা হরতাল চলকালে সকালে জেলা শহরের পৌরবাজার এলাকায় লুঙ্গি পরিহিত পিকেটারের ইটের আঘাতে শামসুন্নাহার ঝর্ণা (৩৫) নামে এক স্কুল শিক্ষিকা নিহত হন। নিহত শামসুন্নাহার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের তাওহিদ ল্যাবরেটরি স্কুলের সহকারি শিক্ষকা ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার পোড়াগাছা এলাকায়।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে হরতাল অবরোধে ৩ জন নিহত হওয়ার খবর আছে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ কাউকে হত্যা করার জন্য গুলি ছোড়ে না, বরং সহিংসতা থামানোই আমাদের লক্ষ্য।