নেতাদের নির্দেশেই গাড়িতে আগুন দিই ধরা পড়ার পর ২ জনের জবানবন্দি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২৩:০৬,অপরাহ্ন ১৯ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক:: মিরপুর বাঙ্লা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আকরাম হোসেন (২০)। ছাত্রদলের কর্মী। দেখতে স্মার্ট। তবে আকরামের সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর রূপ। রাজধানীতে যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুড়ে ‘মানুষ মারা’ তার কাজ। কোন গাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, কে মরল, তা দেখার সময় নেই আকরামের। সে জানে, নেতা নির্দেশ দিয়েছেন, গাড়িতে আগুন দিতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েও সেই কাজটা করে যাচ্ছে সে। কে এই বড় নেতা? শনিবার রাতে রাজধানীর গুলিস্তানে গাড়িতে আগুন দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে তার নামও জানিয়েছে আকরাম। একই রাতে মিরপুরে গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে মিরপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আঙ্গুর।
তাদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় সাধারণ মানুষ দগ্ধ হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করলেও সেই যন্ত্রণাবোধ নেই বোমাবাজ এই দু’জনের।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জয়পাড়া পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে আকরাম। এতে বাসটিতে আগুন ধরে চালক বাবলু আহত হন। তবে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির মালিক হাবিবুর রহমানসহ পরিবহন শ্রমিকরা আকরামকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। এরপর গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে পুলিশ তাকে ওই রাতেই ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আকরাম জানায়, সে মিরপুরে থাকে। কলেজে ছাত্রদল করে। রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে গুলিস্তান এলাকায় গাড়িতে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব পায় সে। এজন্য শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে গুলিস্তানে আসে। কে এই রুবেল ভাই? জানতে চাইলে আকরাম জানায়, শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি। গাড়িতে আগুন দিলে টাকা পাওয়া যায় কি-না জানতে চাইলে আকরাম বলে, কোনো টাকা-পয়সা পাই না। শুধু নির্দেশ পালন করি। নেতাদের নির্দেশ না শুনলে দল থেকে বাদ দিয়ে দেবে। কোনো পদ দেবে না। গুলিস্তানে লোকজন তাকে ধরে মারধর করার পর পুলিশ নিয়ে তার ডান পায়ে গুলি করে বলে অভিযোগ করে সে। পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, আকরামের সঙ্গে আরও কয়েকজন গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। তারা গাড়িতে আগুন দেয়। পুরো ঘটনাটি শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল তদারকি করে। শনিবার রাতে রুবেলের নির্দেশেই সে গুলিস্তানে গাড়িতে আগুন দেয়। তার কাছ থেকে একটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। আরও তথ্য জানতে আকরামকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পায়ে গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আকরামসহ কয়েকজন মিলে গাড়িতে আগুন দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। ওই সময় তার পায়ে এক রাউন্ড গুলিবিদ্ধ হয়। তবে পুলিশই তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দিয়েছে। সে এখন সুস্থ।
এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়ে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার সময় জনতা আঙ্গুর নামে এক যুবককে হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দেয়। পরে তাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী আরও পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আঙ্গুর মিরপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আঙ্গুর জানায়, নেতারা তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, মিরপুরে যাতে কোনো গাড়ি না চলে। সেজন্য সে গাড়িতে আগুন দেয়। তা ছাড়া তাদের সম্মেলন হয়নি। তাই মিরপুরে যুবদলে পদ ধরে রাখতে নেতাদের নজরে থাকতে গাড়িতে আগুন দেয় সে। এজন্য কয়েকজন টোকাইকে টাকা দিয়ে মিরপুর এলাকায় পেট্রোল বোমা ছোড়ে সে। মিরপুর থানার এসআই পলাশ হোসেন সমকালকে বলেন, বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার নির্দেশদাতা কয়েকজনের নাম জানিয়েছে আঙ্গুর। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া আঙ্গুরকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।