নরসিংদীতে মৃত তরুণী ছয় মাস পর জীবিত উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫১:১৪,অপরাহ্ন ০৯ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
নরসিংদীতে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আফছা আক্তারকে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ গুম করেছে- এমন অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলা করেন আফছা আক্তারের মা হালিমা বেগম।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর আফছা আক্তারকে ঢাকা মগবাজারের পেয়ারাবাগ থেকে জীবিত উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও শিবপুর মডেল থানার পুলিশ।
যেখানে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে সংসার করছিলো আফছা। আটক করা হয় তার মা হালিমা ও নতুন স্বামী সেলিকেও। নারী শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে বাদীর বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। এপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার শিবপুর মডেল থানা পুলিশ তাদের ৩ জনকে আদালতে প্রেরণ করেছে।
জানা যায়, ২০১২ সালে রায়পুরা উপজেলার লোচনপুরা গ্রামের আফছার সঙ্গে বিয়ে হয় শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের পোশাক কর্মী হেলিম খানের। বছর না ঘুরতেই তাদের সংসারে শুরু হয় নানান অশান্তি। বিয়ের এক বছরের মাথায় সেলিম নামে এক গাড়ী চালক সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আফছা। জেনারেট বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের কাজের সূত্র ধরেই নরসিংদীতে আসা যাওয়া ছিল যশোরের শংকরপুর গ্রামের মতিউরের ছেলে সেলিমের।
সেই সূত্র ধরেই আফছার সাথে পরিচয় ঘটে তার। এ পরিচয়ের সূত্র ধরে সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আফছা। পরে ২০১৪ সালের ২৫ আগষ্ট সংসার ছেড়ে পালিয়ে ঢাকার মগবাজারে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রি নামে কাজী অফিসে সেলিমকে বিয়ে করে। এরপর থেকে মগবাজারের পেয়ারাবাগ এলাকায় গড়ে তুলেন সুখের সংসার। আগের স্বামীকে তালাক না দিয়েই আফছা নতুন সম্পর্কে জড়ান। এমনকি সেলিমও তার আগের স্ত্রীকে না জানিয়ে আফছার প্রস্তাবে সাড়া দেয়। সেলিম ১৯৯৬ সালে বিয়ের করে ওই সাংসারে এক সন্তানও রয়েছে তার স্ত্রী ও সন্তান যশোরের অভয়নগরে বসবাস করছেন। মাঝে মধ্যে তিনি গ্রামের বাড়ীতে যাতায়াত করতেন।
আর এদিকে আফছার খোঁজ না পেয়ে তার মা হালিমা বেগম এঘটনায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলায় হেলিমসহ ৬ জনকে আসামী করা হয়।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, যৌতুকের জন্য স্বামী হেলিম খান (৩০), দেবর নাঈম খান (২৫), শাশুড়ি আজুফা বেগম (৪৫), প্রতিবেশী সুমি আক্তার (৩০), মিথিলা ও মাহদি তার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিল। যৌতুক না দিতে পারায় উল্লেখিত আসামিরা একে অপরের যোগসাজশে মেয়ে আফছা বেগমকে খুন করে লাশ গুম করেন। এরপর পুলিশ আসামিদের প্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে এনেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে আসামিদের গ্র্রেফতারের পর মামলার বাদীও লাপাত্তা হয়ে যায়। এতে পুলিশ আরও বিপাকে পড়ে। পরে বাদী ও ভিকটিম সম্পর্কে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে মা ও মেয়ের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। আফছা বেগমের এ বিয়ে ছিল তিন নম্বর। আগেও তিনি বিয়ের পর দুই স্বামীকেই নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের কাজ থেকে মোটা অংকের নগদ টাকা র্স্বণালংকার নিয়ে ছেড়ে চলে আসেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশে মামলাটির ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহনগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পারে আফছাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়নি। জীবিত আফছা বরং পরকীয়ার টানে সংসার ছেড়ে নতুন স্বামীকে নিয়ে সুখেই বসবাস করছেন।
শুধু কি তাই মামলার বাদী আফছার মা হালিমাও মেয়ের নতুন জামাইয়ের সংসারে থাকছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি’র সহকারী কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকীর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবপুর থানার এস আই আব্দুল্লাহ আজিজ একটি টিম ঢাকার মগবাজারের পেয়ারাবাগ রেললাইন সংলগ্ন ৫৮৫ নং বাসায় অভিযান চালিয়ে আফছা, তার স্বামী সেলিম ও মা হালিমাকে আটক করে। এরপর বের হয়ে আসে মিথ্যা মামলা করে আগের ম্বামীকে হয়রানীর অনেক অজানা তথ্য। মিথ্যা মামলায় যখন আফছাসহ ৩ জন গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে তখনও মামলার ভয়ে আত্মগোপনে হেলিম ও তার পরিবারের সদস্যরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবপুর থানার এস আই আব্দুল্লাহ আজিজ বলেন, মেয়ের পরকীয়ার পর আবার বিয়ের কথা জেনেও মিথ্যা মামলা দিয়ে আফসার স্বামীকে ফাসানোর চেষ্ঠা করছেন হালিমা। তদন্তে পর এই প্রতারনা ফাস হওয়ার মিথ্যা মামলার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
আফছার মা হালিমা বেগম বলেন, মেয়ের বিয়ের কথা জেনেও মামলা তুলে না নেওয়া তার ভুল হয়েছে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এ ভুল করেছি। হেলিম খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্ত্রী পালিয়ে যাবার পর অনেক খোঁজাখুজি করেছেন। গ্রেফতারের ভয়ে তিনি বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াছেন। নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় হারিয়েছেন চাকুরী। সব হারিয়ে এখন চরম দুর্দিনে সময় কাটছে তার।
শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, বিচার চাওয়ার নামে মানুষ যে প্রতারণাও করতে পারে, এটি তার প্রমাণ। এটি খুবই জঘন্য একটি কাজ, আমরা এর নিন্দা জানাই। এখন যত দ্রুত সম্ভব হেলিম ও তার পরিবারকে এই মিথ্যা মামলা থেকে যেন অব্যাহতি দেয়া হয় সেটিই চাওয়া সকলের।