নকল পেনড্রাইভে বাজার সয়লাব!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০০:০৬,অপরাহ্ন ১০ জুন ২০১৫
তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক :: নকল হার্ডড্রাইভের মতো নকল পেনড্রাইভেও দেশের প্রযুক্তি বাজার সয়লাব। ঢাকায় আসল নকল মেশানো থাকলেও মফস্বল শহরগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব নকল পণ্য। যার কারণে বাজার ও সুনাম হারাচ্ছে প্রকৃত পেনড্রাইভের ব্র্যান্ডগুলো। আমদানিকারক ও অনুমোদিত পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব অভিযোগ।
পোর্টেবল ইউএসবি মেমোরি ডিভাইস হিসেবে খ্যাত পেনড্রাইভের নকল ব্যবহার করে ক্ষতির শিকার হচ্ছে ব্যবহারকারীরা। নকলটিতে অল্প ডাটা সেভ করতেই দেখাচ্ছে আর ‘স্পেস’ নেই। কখনও পেনড্রাইভ ওপেন হচ্ছে না, ডাটা হারিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি নানা সমস্যা। এদিকে ব্যবহারকারী ভাবছেন, এই কোম্পানির পেনড্রাইভ ভালো নয়। অথচ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটি হয়তো পেনড্রাইভের ক্ষেত্রে কোনও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। দেশের একাধিক অনুমোদিত পেনড্রাইভের পরিবেশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছেন। অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পেনড্রাইভটি তাদের প্রতিষ্ঠানের নামের হলেও সেটি নকল। ভালো করে বুঝিয়ে বলার পরে বিষয়টি ক্রেতারা খেয়াল করতে পারছেন।
দেখা যায়, পেনড্রাইভগুলো কিনে কয়েক দিন ব্যবহারের পরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একবার এসব পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক করা যায় না। এসব কারণে প্রতিনিয়ত পণ্য কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। অনেক সময় সস্তায় অনেক বেশি ডাটা ধারণ ক্ষমতা (গিগাবাইট) সম্পন্ন পেনড্রাইভ কিনলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের পেনড্রাইভ বাজারের ৪০-৪৫ ভাগ শেয়ার রয়েছে ট্রান্সসেন্ড ব্র্যান্ডের। এই ব্র্যান্ডের পেনড্রাইভের অনুমোদিত পরিবেশক ইউসিসি (কম্পিউটার সোর্সও ট্রান্সসেন্ড বিক্রি করে)। ইউসিসির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সারোয়ার মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঢাকার ক্রেতারা অনেক সচেতন। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা টার্গেট করছে মফস্বলকে। ওখানকার ক্রেতারা প্রযুক্তিপণ্য কেনার সময় রাজধানীর ক্রেতাদের মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে না। রাজাধানীর ক্রেতাদের গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা, মতিঝিল এবং পল্টন এলাকা থেকে পেনড্রাইভ কেনার সময় সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চীন থেকে নকল পেনড্রাইভ বানিয়ে আনছে। এসব মার্কেটে নকল পেনড্রাইভ বিক্রির পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তা পাঠিয়ে দিচ্ছে ঢাকার বাইরেও।
সারোয়ার মাহমুদ খান জানান, প্রযুক্তিপ্রেমীদের ট্রান্সসেন্ডের প্রতি শতভাগ আস্থা থাকায় এই পেনড্রাইভটি বেশি নকল হচ্ছে। প্যাকেট একই রকম, লোগোও এক। এগুলো ক্রেতারা ধরতে পারে না।
জানা গেল, গত ৪-৫ বছর ধরে পেনড্রাইভের বাজারে এ ধরনের নকলের উৎসব চলছে। নকল পেনড্রাইভে বিক্রেতারা ওয়ারেন্টিও দিচ্ছে না। দিলেও ৩ মাস বা বড়জোর ৬ মাস। ক্রেতারাও অল্প টাকার জিনিস বলে ওয়ারেন্টি ‘ক্লেইম’ করতে যায় না।
সারোয়ার মাহমুদ খান জানালেন, দেখা গেল বাজার থেকে কেনা একটি পেনড্রাইভের ধারণক্ষমতা ১৬ গিগাবাইট। কম্পিউটারে ঢোকালে ১৬ গিগাই দেখাচ্ছে, কিন্তু ৪ গিগার বেশি ডাটা রাখতে গেলেই পেনড্রাইভ ‘মেমোরি ফুল’ দেখাচ্ছে। এগুলোই নকল। পেনড্রাইভটি ফরম্যাট দিলে ওই ৪ গিগাই দেখাবে। আসল পেনড্রাইভ কিনতে পেনড্রাইভের পেছনে বা প্যাকেটে সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের হলোগ্রাম স্টিকার (নিরাপত্তা স্টিকার) দেখে কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশে কিংস্টোন ও স্যানডিস্ক নামের দুটি ব্র্যান্ডের পেনড্রাইভ পাওয়া যায়। কিন্তু এ দুটো পণ্যের কোনও অনুমোদিত পরিবেশক দেশে নেই। এ সুযোগটাও নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
স্মার্ট টেকনোলজিসের জ্যেষ্ঠ পণ্য ব্যবস্থাপক আবদুল হান্নান জানালেন, তার প্রতিষ্ঠান (স্মার্ট টেকনোলজিস) টুইনমস পেনড্রাইভের অনুমোদিত পরিবেশক। কিংস্টোন ও স্যানডিস্ক নামের দুটি পণ্য দেশের বাজারে রিফার্বিশ হয়ে ঢোকায় আসল পণ্যগুলো বাজার হারাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, মোবাইল মার্কেট দিয়ে এসব নকল পণ্য বাজারে ঢুকছে। যারা বিক্রি করছে তারা নিজেরাই ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। তাদের কম দামে পণ্য কেনা থাকায় গ্রাহকরা কখনও কোনও সমস্যা নিয়ে এলে তা পাল্টে দিচ্ছে। ফলে ক্রেতা প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পারে না বিষয়গুলো।
এদিকে কম্পিউটার সোর্সের হেড অব স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস ইউনিট মেহেদী জামান তানিম বললেন, দেশে নকল চীনা পেনড্রাইভ ঢুকছে। এগুলোর বেশিরভাগই নন ব্র্যান্ডের। দেশে এনে একেকটা নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এর বড় উৎস হলো এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। প্রসঙ্গত, সোর্স অ্যাপাসার ব্র্যান্ডের পেনড্রাইভের অনুমোদিত পরিবেশক।