দেশে জিরো ফেসবুকের সঙ্গে ফ্রি ইন্টারনেট সেবার দ্বন্দ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২১:৩৪,অপরাহ্ন ২৪ জুন ২০১৫
তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক ::
দেশে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে জিরো ফেসবুক ও ফ্রি ইন্টারনেট সেবার মধ্যে। দুটিতেই ফেসবুক ব্যবহার ফ্রি। মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর অভিযোগ, ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় ফেসবুকের ব্যবহার জিরো ফেসবুকের মতোই। তাহলে একই সেবায় যুক্ত হয়ে কী লাভ? ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় জিরো ফেসবুকের চেয়ে ফেসবুক ব্যবহারে যদি বেশি সুবিধা পাওয়া যেত তাহলে এই সেবায় যুক্ত হওয়ার একটি বাড়তি প্রচেষ্টা থাকত। এখন যে প্রচেষ্টা বিদ্যমান তা একেবারে ধীর গতির।
দেশের চার মোবাইলফোন অপারেটর আগে থেকেই জিরো ফেসবুক সেবা দিচ্ছে (অর্থাৎ ফেসবুক দেখার সময় কোনও ডাটা কাটা যায় না)। সম্প্রতি চালু হয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা। এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একমাত্র মোবাইলফোন অপারেটর রবি। মূলত এ দুটিতেই সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি ফ্রি (ডাটা খরচ ছাড়া) ব্যবহার করা যায়। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে- জিরো ফেসবুক থাকতে অাবার ফ্রি ফেসবুক (ফ্রি ইন্টারনেট সেবা) কেন? যদিও ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় ফেসবুক ছাড়াও অারও ২৮টি ওয়েবসাইট বিনা খরচে দেখা যায়।
মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ‘জিরো ফেসবুক’ (http://0.facebook.com) সেবা দিচ্ছে ফেসবুক কোম্পানি। যাতে এই সেবাটির একটি টেক্সট-অনলি ভার্সন বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে থ্রিজি সেবাদানকারী গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও রবি এই জিরো ফেসবুক সেবা প্রদান করছে। ব্রাউজার চয়েসের দিক দিয়ে গ্রামীণফোনের জিরো ফেসবুক বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে। আর অন্য তিন অপারেটর প্রায় একই রকম সেবা দিয়ে থাকে।
দেশে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর থেকে একটি গোষ্ঠী এই সেবার খারাপ দিকগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। বলা হচ্ছে ফেসবুক এর মাধ্যমে বিরাটা এক বিজ্ঞাপনী ফাঁদ পেতেছে। কিন্তু অাদতে দেখা যাচ্ছে, ফ্রি ইন্টারনেট বা জিরো ফেসবুক সেবায় কোনও বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় যে পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখা যাচ্ছে সে দুটোও বিজ্ঞাপনমুক্ত। বিজ্ঞাপনগুলো যাতে দেখা না যায় সে ব্যবস্থা অাগেই নেওয়া হয়েছে। ফলে কীভাবে ফেসবুক ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে পয়সা কামাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় যে হারে ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ছে প্রকারন্তরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান জানান, মানুষজন ফ্রি ইন্টারনেটের সঙ্গে ফ্রি ইন্টারনেট সেবাকে গুলিয়ে ফেলছেন। দেশে ফ্রি ইন্টারনেটের নামে যেটি চালু হয়েছে সেটি অাসলে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা। ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট কিছু সেবা এটিতে বিনামূল্যে বা ডাটা খরচ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে।
বিষয়টি পরিষ্কার করতে গিয়ে তিনি করেন, দেশের সাড়ে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে ইন্টারনেটের প্রতি অাগ্রহী করে তুলতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি’র মতো প্রকল্প এগিয়ে এসেছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ফেসবুক ব্যবহার করে বা দৈনিক একাধিক ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে তাদের জন্য বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবা নয়। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না, যাদের সুযোগ নেই, অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা কম- তাদের জন্যই এই ইন্টারনেট সেবা। তারা যদি ফেসবুক বিনামূল্যে ব্যবহার করেত পারে, পড়াশোনার সাইটে যেতে পারে, খবরের কাগজ পড়তে পারে বা চাকরির খবর খুঁজতে পারে তাহলে কেন সে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করবে না।
তিনি উল্লেখ করেন, অাজ থেকে ৫-৭ বছর অাগে চিৎকার করতাম ফেসবুক ব্যবহার কর, ফেসবুক ব্যবহার কর। কারণ সে সময় অামার ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার মতো তেমন কনটেন্ট ছিল না। কিন্তু অাজ, অাজ ফেসবুক ব্যবহার কর কর বলে গলা ফাটাই না। এখন গ্রামেগঞ্জে যেখানে যাচ্ছি সেখানেই বলছি ইন্টারনেট ডট ওআরজি’র মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার কর। অাশা করি ৫-৭ বছর পরে এই চিত্র থাকবে না। অনেকটাই বদলে যাবে।
তিনি অারও বলেন, অাগামীকাল (বুধবার) পাকিস্তানে চালু হচ্ছে ইন্টারনেট ডট ওআরজি। একের পর এক দেশ এটিতে যুক্ত হচ্ছে। তবে বিরোধিতা সব সময় থাকবে। সব ভালো উদ্যোগের পেছনে এরকমটা দেখা যায়। তিনি জানান, যতগুলো দেশে ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু হয়েছে সেখানে অন্তত দুটি মোবাইল অপারেটর একসঙ্গে এই সেবা দেওয়া শুরু করেছে। শুধু ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। একটি অপারেটর এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
এদিকে মোবাইল অপারেটর রবিও ‘ফ্রি ইন্টারনেট’ বিষয় থেকে সরে এসে ‘ফ্রি ইন্টারনেট সেবা’ বলায় অভ্যস্ত হচ্ছে। অপারেটরটির চিফ অপারেটিং অফিসার মাহতাব অাহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এটি অাসলে ফ্রি ইন্টারনেট নয়, ইন্টারনেটের কিছু সেবা রবি ফ্রি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু করে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। প্রতিদিন অপারেটরটির ২০ লাখ টাকা ক্ষতি (অায় কমেছে) হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালুর পরে অপারেটরটির গ্রাহক বাড়ছে।
জানা গেছে, গত ১০ মে এই সেবা চালুর পরে এখন পর্যন্ত রবির ডাটা ব্যবহারের (ইন্টারনেট) হার ১৩ শতাংশ কমে গেছে। অার জানা গেছে, রবি এক বছরে ইন্টারনেট ডট ওআরজি’র জন্য ২ কোটি টাকা খরচ করবে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রামীণফোনও ইন্টারনেট ডট ওআরজি’তে যুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে কিছু বিষয়ের সমাধান না হওয়ায় এখন অপারেটরটি ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে।
বাংলালিংক সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কবে নাগাদ অপারেটরটি ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় যুক্ত হতে পারবে।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মোবাইলফোন অপারেটরগুলো জিরো ফেসবুক থাকায় ইন্টারনেট ডট ওআরজি’র সঙ্গে যেতে অাগ্রহী নয়। তাদের ধারণা, ফ্রি ইন্টারনেট সেবায় মানুষ ফেসবুকই বেশি ব্যবহার করে। অন্যান্য সাইটে খুবই কম যায়। এ কারণে তাদের কাছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়টি ততটা কার্যকরী হবে বলে মনে হয় না।