দেশের সাড়ে ৮ হাজার গ্রামীন ডাকঘরের অবস্থা নাজুক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪১:০৭,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: দেশের গ্রামীন অঞ্চলের ডাকঘরের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যাংকের মতো সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলারও সুযোগ ছিল ডাকঘরে। পোস্টকার্ড বা খামও এখন আর কাউকে কিনতে দেখা যায় না। এখন দু-একটি সরকারি চিঠিপত্র আদান-প্রদান, সরকারি দু-একটি মনিঅর্ডার ও দু-চারটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি ছাড়া আর কোনো প্রয়োজনেই আসছে না ডাকঘরগুলো।
ডাকঘরের অনেক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেই কুরিয়ার সার্ভিস সেবা। কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য শহরের সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকগুলোই এখন ভরসা। মনিঅর্ডার সার্ভিস থাকলেও বিকাশ বা মোবিক্যাশের মতো বেসরকারি সার্ভিসের দৌরাত্ম্যে এখন আর কেউ মনিঅর্ডার করেন না। ইলেকট্রনিক মনিঅর্ডার নামে একটি সেবা চালু করা হলেও সাড়ে চার হাজার ডাকঘরেই ইলেকট্রনিক মনিঅর্ডার সুবিধা নেই।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চালু হয় মাগুরা সদর উপজেলার বগিয়া গ্রামের ডাকঘরটি। একসময়ের সরগরম সেই ডাকঘরের এখন জীর্ণদশা। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। পোস্টমাস্টার হাবিবুর রহমানও কোনোরকম একটু হাজিরা দিয়েই চলে যান। ডাক পিয়নকেও আর দেখা যায় না বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি বিলি করতে। কেবল বগিয়া ডাকঘরটিই নয়, সারাদেশের প্রায় সাড়ে আট হাজার গ্রামীণ ডাকঘরেরই এই ভগ্নদশা। অথচ এসব ডাকঘরে এখনও কর্মরত ১৭ হাজার জনবল।
তাদের অভিযোগ, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কুরিয়ার সার্ভিস আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো নানা প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের ডাক ব্যবস্থাকে একরকম গলাটিপে হত্যা করেছে। এখন দু-একটি সরকারি চিঠিপত্র আদান-প্রদান, সরকারি দু-একটি মনিঅর্ডার ও দু-চারটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি ছাড়া আর কোনো প্রয়োজনেই আসছে না ডাকঘরগুলো। ফলে ডাকঘরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাই বলতে গেলে কোনো কাজই নেই।
জেলা পর্যায়ের একটি সাব-পোস্ট অফিসের একজন সাব-পোস্টমাস্টার মাসে বেতন পান ১২ হাজার টাকা। বিপরীতে গ্রামীণ ডাকঘরের একজন পোস্টমাস্টার বেতন পান মাত্র এক হাজার ২৬০ টাকা। উভয়ের মাসিক মজুরির ব্যবধান অন্তত সাড়ে ১০ হাজার টাকা। কয়েক বছর ধরে এ বৈষম্যের শিকার ডাক বিভাগের ১৭ হাজার কর্মচারী।
একইভাবে সাব-অফিসের একজন ডাকপিয়নের বেতন নয় হাজার টাকা এবং গ্রামীণ শাখার ডাকপিয়নের বেতন এক হাজার ২০০ টাকা। সাব-অফিসের রানার বেতন পান আট হাজার টাকা এবং গ্রামীণ শাখার রানার পান এক হাজার ১৭০ টাকা। গ্রামীণ শাখার কর্মচারীদের কোনো উৎসব বোনাস বা পেনশনও দেওয়া হয় না।
প্রকৃতপক্ষে ৯৯ শতাংশ পোস্ট অফিসের তেমন কাজ নেই। বছরে এ খাতে সরকারের আয় সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। বিপরীতে খরচ ৫০ কোটি টাকা। তারপরও এগুলো গুটিয়ে নেয়নি সরকার। কারণ, গ্রামের মানুষকে নূ্ন্যতম ডাকসেবা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
গ্রামীণ ডাকঘরগুলোকে ই-সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তখন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে দেওয়া সেবাগুলো গ্রামীণ ডাকঘরের ই-সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। জন্মনিবন্ধন সনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশন সার্টিফিকেট এ ধরনের সেবা ডাকঘরের ই-সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি সেখানে ইন্টারনেট সুবিধাও থাকবে। ডাকঘরগুলোর সঠিক ব্যবহারের জন্য এ রকম একটি বিশদ পরিকল্পনাও করা হয়েছে।