দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে শপথ নিলেন নবীগঞ্জের মায়ারুন আক্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১০:২২,অপরাহ্ন ০২ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: নবীগঞ্জে দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের পর সরকারিভাবে ইউ/পি সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন মায়ারুন আক্তার। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার সময় নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে উপজেলার দেবপাড়া ইউ/পির মহিলা সদস্যা (৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড) হিসেবে মায়ারুন আক্তারকে শপথ পাঠ করান উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ-বিন হাসান।
নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে ইউ/পি সদস্য হিসেবে শপথ পাঠ করেছেন তিনি। উপজেলার ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পূণরায় বিজয়ী হওয়ার পর মায়ারুন আক্তার এ প্রতিনিধির কাছে তার মনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেন- আল্লাহ্’র অশেষ কৃপায় মহামান্য হাইকোর্টের রায় আমার পক্ষে আশায় আমি আল্লাহ্’র শুকরিয়া জানাই। অবশেষে সদস্য হিসেবে জনগণের কাজ করতে পারবো বলে আজ আমি প্রশাসনের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৮মে দেবপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে মায়ারুন আক্তার এবং হোছনা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন চলাকালে ওই ৩টি ওয়ার্ডে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার ৮নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র দেবপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র দিনারপুর আইনগাঁও মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট গণনা হলেও কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করেননি। কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় মায়ারুনের এজেন্টকে। কিন্তু এজেন্ট থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রথমে মায়ারুন আক্তার বিজয়ী হিসেবে তার পক্ষে আনন্দ মিছিলও করা হয়।
পরবর্তীতে হবিগঞ্জ রিটার্নিং অফিসার হোসনা বেগমকে বিজয়ী দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন। এই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে মায়ারুন আক্তার বাদী হয়ে ২০১৬ সনের ৩০ জুন হবিগঞ্জ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল জজ আদালত ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩/২০১৬।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, বিজ্ঞ আদালত গত বছরের ১৬ মে ট্রাইব্যুনালের তত্বাবধানে ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ভোট পুনঃগণনা করা হয়। এতে প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী ৩টি কেন্দ্রে মায়ারুন আক্তার ১ হাজার ৬৬৮ ভোট এবং হোসনা বেগম ১ হাজার ৬৪৫ ভোট পান। এতে ২৩ ভোটের ব্যবধানে মায়ারুন আক্তারকে দেবপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসন-৩ (৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড) এ নির্বাচিত বলে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক তানভীর আহমেদ মামলার রায় প্রদান করেন। পরে গত বছর মোছাঃ হোছনা বেগম ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
নির্বাচনী আপীল মামলা নং ১/১৭। ওই মামলায় দীর্ঘ শুনানী শেষে উভয় পক্ষের আইনজীবির সামনে পূনরায় ভোট গণনা করা হয়। প্রতিটি ভোট আলাদা আলাদা করে দেখা হয় এবং চুল ছেড়া বিশ্লেষন করে মায়ারুন আক্তার তাল গাছ প্রতিকে ৫ ভোট বেশি পান। পরে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল হবিগঞ্জের বিজ্ঞ বিচারক ও যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত সাইফুর রহমান সিদ্দিক ও নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া মায়ারুন আক্তারকে বিজয়ী ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, অত্র নির্বাচনী আপীল মোকদ্দমাটি প্রার্থী রেসপনডেন্ট পরে বিরুদ্ধে দোতরফা বিনা খরচায় নামঞ্জুর হয়। বিজ্ঞ নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ১৬/০৫/১৭ইং তারিখে তর্কিত আদেশ এতদসঙ্গে বহাল ও বলবৎ করা হল। অত্র রায়ের অনুলিপি সহ নিম্ন আদালতের নির্বাচনী ৩/১৬ নং মোকদ্দমার সাথে নথী এবং সংশ্লিষ্ট বস্তাবন্ধ ব্যালট পেপার সমূহ সত্বর ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
আদেশের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা, জেলা নির্বাচন অফিসার, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্ণিং অফিসার, ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ বরাবরে প্রেরণের জন্য আদেশে বলা হয়েছে।