থাই গণকবরে মরদেহের ১০টি বাংলাদেশির : দালালদের হাতে বন্দি ৮০০
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৩:৪২,অপরাহ্ন ০৩ মে ২০১৫
প্রবাস ডেস্ক :: থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের সংখলা প্রদেশে আবিষ্কৃত গণকবরে অন্তত ১০ বাংলাদেশির মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
গণকবরের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া আনুজার নামে ২৮ বছর বয়সী এক যুবককে উদ্ধৃত করে রোববার (৩ মে) এ খবর দিয়েছে ব্যাংকক পোস্ট।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত শুক্রবার (১ মে) সাদাও জেলার একটি দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালালদের একটি পরিত্যক্ত ক্যাম্পের পাশে এ গণকবরের সন্ধান পায় পুলিশ। মানবপাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমারসহ এ অঞ্চলের অভিবাসীরা অবৈধ পথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী এ এলাকায় পৌঁছে জিম্মি হয় বলে ধারণা করা হয়।
অভিযান চলাকালে গণকবর খুঁড়ে অন্তত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় গণকবরের পাশ থেকে আনুজার ছাড়াও উদ্ধার করা হয় দুই কিশোরকে।
মানবপাচারকারীদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আনুজার বলেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে আমরা যারা মুক্তিপণ আদায় করতে পারিনি, তাদের ওই ক্যাম্পে বন্দি রাখা হয়েছিল। আমরা বেঁচে আছি কি মরে আছি, তার কোনো খোঁজ নিতো না দালালরা। উপরন্তু মুক্তিপণ আদায়ে সবাইকে বেদম পেটানো হতো এবং নির্যাতন করা হতো।… ওই ক্যাম্পে আমরা কখনোই পর্যাপ্ত খাবার পেতাম না…!
আনুজার জানান, তিনি মনে করেন পরিত্যক্ত ক্যাম্পটির পাশে ওই গণকবরে অন্তত ১০ বাংলাদেশি এবং ৩০ রোহিঙ্গার মরদেহ রয়েছে।
পরিত্যক্ত ক্যাম্পটি মোট আটজন দালালের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও জানান আনুজার। তিনি বলেন, আমি দালালদের খুব ভালো করে চিনি- আহমদ আলী, আনওয়ার ও সরিম-ইদা…। এদের কেউ রোহিঙ্গা, কেউ মালয়েশিয়ান।
সংখলার গণস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিরিচাই লিয়ান্নাপাসাই বলেন, আনুজারকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও এখন তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।
রয়্যাল থাই পুলিশের ফরেনসিক সায়েন্স উপদেষ্টা জেনারেল জারামপোর্ন সুরামান্নে জানান, সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় খুঁজে পাওয়া গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত ২৬ মরদেহের মধ্যে ২৫টির ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এদের লিঙ্গও শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে, এখন পর্যন্ত সম্প্রদায়, জাতীয়তা বা কোনো পরিচয় জানা যায়নি বলে জানান জারামপোর্ন।
অভিযানে উদ্ধার হওয়া ১৪ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোর জানায়, তারা আট মাস ধরে ওই ক্যাম্পে বন্দি ছিল। শুক্রবার (১ মে) থাই নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানে গেলে দালালরা জিম্মিদের নিয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়।
দুই কিশোর আরও জানায়, মানবপাচারকারীদের হাতে এখনও ৮০০ শরণার্থী বন্দি আছে বলে তারা মনে করে। তবে, এদের মধ্যে কতোজন বাংলাদেশের সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
দুই কিশোরের তথ্যের ভিত্তিতে সংখলা প্রদেশে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে বলে জানায় থাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশ প্রধান জেনারেল সমিয়ত পুমপানমৌং জানান, যেখানে গণকবরটির সন্ধান মিলেছে, সেটি আসলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। মালয়েশিয়ায় পাচারের আগে এখানে মাটির গর্তে বাঁশের ছাউনি দিয়ে রাখা হতো অভিবাসীদের।
মাশরুম সংগ্রহে ওই এলাকায় যাওয়া গ্রামবাসী এ গণকবরের সন্ধান পায় বলে জানান তিনি।