থাইল্যান্ডে পাচারকারীদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২১:১৯,অপরাহ্ন ০৫ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
থাইল্যান্ডে মানব পাচারকারীদের একটি বন্দিশিবিরেই ৪০০ জন রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। গতকাল সোমবার শংখলা প্রদেশের পেদাং বেসার শহরের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ওই নির্যাতন শিবির থেকে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা নারী এ তথ্য জানান। তাঁর নাম রহিমা খাতুন (২৫)।
ব্যাংকক পোস্ট জানিয়েছে, এ জায়গাতেই রহিমা বন্দী ছিলেন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পেদাং বেসারে রূপ চাঙ পর্বতের কাছে গ্রামবাসী রহিমা খাতুনকে খুঁজে পান। কয়েক দিন আগে পেদাং বেসারের পাশের জঙ্গলেই ৩০টি গণকবর পাওয়া গেছে। এখানকার একটি গণকবর থেকে ২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
রহিমা খাতুনকে গতকাল সোমবার বিকেলে পেদাং বেসার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে তাঁকে বিহ্বল ও অত্যন্ত কাতর দেখা যায়। ‘আমাকে বহুবার মারধর করা হয়েছে’-এই বলে ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করেন রহিমা। নিজেকে রোহিঙ্গা বলে পরিচয় দিয়ে দোভাষীর মাধ্যমে তিনি জানান, তাঁকে মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে এবং প্রায় চার মাস থাইল্যান্ডের একটি জঙ্গলে এক বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
রহিমা জানান, ওই শিবিরে প্রায় ৪০০ জন বন্দী রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। কিন্তু তিনি ওই বন্দিশিবিরের অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারেননি।
পর্যব্ক্ষেকদের ধারণা, থাইল্যান্ডের যে স্থানে গণকবর পাওয়া গেছে, যেখানকারই কোনো এক বন্দিশিবির থেকে রহিমা পালিয়ে এসেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই বন্দিশিবিরে ৮০০ থেকে এক হাজার জনকে আটকে রাখা হয়েছিল।
রহিমা বলেন, ‘তারা বলছিল, পুলিশ আসছে। সকলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমি পারছিলাম না, কারণ আমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।’ সবাই দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি হাঁটতে শুরু করেন। গ্রামবাসী দেখতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি হাঁটতে থাকেন। কতদূর পথ তিনি হেঁটেছিলেন, তা জানাতে পারেন না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রহিমা জানান, ওই বন্দিশিবিরে তাঁর সঙ্গে তাঁর ১০ বছরের মেয়েও ছিল। কিন্তু এখন তিনি জানেন না, তাঁর সন্তান কোথায় আছে।
এই হাসপাতালে ২৮ বছর বয়সী তুতানসাসাও চিকিৎসা নিচ্ছেন। থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তের যেখানে গণকবর পাওয়া গেছে, সেখান থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি তিনি। গতকাল সোমবার পুলিশপ্রধান সম্যত পুমপানমুয়াং তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান। এ সময় তিনি বলেন, এখানে ৬০ থেকে ৭০টি বন্দিশিবির রয়েছে।
তুতানসাসার বরাত দিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এই বন্দিশিবিরগুলোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাচার হওয়াদের রাখা হতো। অনেকের আত্মীয়স্বজনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করত মানবপাচারকারীরা।’ তুতানসাসা বাংলাদেশের একটি চিনি কারখানায় হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে নয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়।
এর পর থাইল্যান্ডের জঙ্গল এলাকায় তিনটি আলাদা আলাদা বন্দিশিবিরে তাঁকে রাখা হয়। শেষের বন্দিশিবিরটিতে নির্যাতনে কমপক্ষে ৪০ জন মারা গেছে। এসব তথ্য জানিয়ে শঙ্কিত তুতানসাসা বলেন, ‘দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।’
সূত্র: ব্যাংকক পোস্ট