তদন্তেই ঘুরপাক সাইফ পাওয়ারটেক’র দুর্নীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২০:৩৬,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো পরিচালনার দায়িত্ব সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডকে দেওয়ার ক্ষেত্রে দরপত্রে কোন অনিয়ম আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেও এখনো প্রাথমিক তদন্তই শেষ করতে পারেনি দুদক। এখনো পর্যন্ত ফাইল তলবেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তদন্ত কাজ।
তদন্ত শুরুর পর থেকে দুই দফা বদলি হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরফলে দেড় বছর ধরে প্রাথমিক তদন্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক’র বিরুদ্ধে উঠা চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ।
ফলে সাইফ পাওয়ারটেকের দুর্নীতির তদন্ত আদৌ কোনদিন শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কমলাপুর ডিপো পরিচালনার দরপত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না তা তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক চট্টগ্রাম-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক তদন্ত করছিলেন।
সম্প্রতি তাকে চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর ডিপো পরিচালনার দরপত্রসহ যাবতীয় নথি সংগ্রহ করলেও তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেননি তিনি।
সিরাজুল হক বলেন, ফাইলটি নিয়ে আমার আগে আরো একজন কর্মকর্তা তদন্ত করেছিলেন। গত বছর দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি তদন্ত কাজ শুরু করি। যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করলেও অনুসন্ধান শেষ না হওয়ায় প্রতিবেদন জমা দিতে পারিনি।
বর্তমানে তিনি সিলেট কার্যালয়ে কর্মরত আছেন জানিয়ে বলেন, অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগেই আমার বদলি আদেশ হয়। প্রাথমিক কাজ শেষ হলেও পুরোপুরি অনুসন্ধান শেষ হয়নি।
আরেকজন কর্মকর্তাকে ফাইলটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়নি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার ২৩ মাস পরও ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো পরিচালনার কাজ শুরু করেনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দরপত্র দলিলের শর্ত অনুযায়ী, চুক্তির পর সাত মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানটি সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে প্রতি মাসে চুক্তিমূল্যের এক শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হলে চুক্তি বাতিল এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। অর্থ্যাৎ সর্বোচ্চ ১৭ মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার কথা।
বন্দর সূত্র জানায়, ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে যন্ত্রপাতি কিনে ১০ বছর পরিচালনার দরপত্র জমা নেওয়া হয় ২০১২ সালের ১৮ জুন। এই দরপত্রে যোগ্য সর্বনিম্ম দরদাতা হয় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি দর দিয়েছে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই ক্রয় প্রস্তাব সরকারি অনুমোদনের পর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। এ হিসেবে চুক্তির পর ২৩ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় এই ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর অনুমোদনের বিষয়টি বন্দরকে জানানো হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য বলা হয় মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। কিন্তু ক্রয় বিধি না মানা হয়নি। তাই চুক্তি ভঙ্গের বিষয়টি তদন্ত শুরু করে দুদক।