ঢাকায় মোদির কর্মযজ্ঞ শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৯:০১,অপরাহ্ন ০৬ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: দুই দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বেলা দশটা ১৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মোদিকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি। বিমানব্ন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে মোদির দুই দিনের সফর আনুষ্ঠাকিনভাবে শুরু হলো।
‘রাজদূত’ নামের এই উড়োজাহাজটির সামনে দুই পাশে উড়ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা।
টারমাকে ভেড়ার ১৫ মিনিট পর উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসেন সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও ছাই রঙের ওয়েস্ট কোট পরা মোদি নেমে আসে। সিঁড়িতেই সবাইকে নমস্কার জানান তিনি। এ সময় লাল গালিচায় অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদী নেমে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানান তিনি। একটি শিশু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন শুভেচ্ছার ফুল।
লাল গালিচা সংবর্ধনার পর মোদীকে দেওয়া হয় গার্ড অফ অনার। দুই প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সালাম নেন, এসময় বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত।
নরেন্দ্র মোদী গার্ড পরিদর্শন করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন বিমান বন্দরে। ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধানও। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন মোদি। সাভার থেকে ঢাকা ফিরে তিনি যাবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে। সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির সাক্ষাৎ হবে পাঁচ দফা। এসব সাক্ষাতে তারা এক ডজনেরও বেশি যৌথ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে নরেন্দ্র মোদির কাটবে ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। আর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সান্নিধ্যে নরেন্দ্র মোদির কাটবে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা।
ধানমন্ডি থেকে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ফিরবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে এই হোটেলেই থাকবেন তিনি। বিকেলেই শুরু হবে নরেন্দ্র মোদির ব্যস্ত কর্মসূচি। বেলা পৌনে চারটায় নরেন্দ্র মোদি পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হবে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম।
শুরুতেই দুই নেতা একযোগে উদ্বোধন কববেন দুই দেশের মধ্যে নতুন চালু হতে যাওয়া দুটি বাস সার্ভিস। ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলং’র এই দুই বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে এর মাধ্যমে।
নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের সফরকে ঘিরে দুই দেশেই উচ্চাশা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোদী বলেছেন, তার এ সফর সম্পর্কের বন্ধন আরও ‘মজবুত করবে’, দুই দেশের মানুষই ‘উপকৃত হবে’ বলে তার বিশ্বাস।
বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের সামনে গত এক বছরে নিজের ভাবমূর্তি তিনি পাল্টে ফেলেছেন অনেকটাই। কয়েকবার ঢাকা আসার আগ্রহ দেখালেও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি পর্যন্ত অপেক্ষা করে ৫০ হাজার ছিটমহলবাসীর ‘জীবনবদলের’ আশার দলিল হাতে নিয়েই এবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন মোদি।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের ভাষায়, ‘ব্যতিক্রমী প্রতিবেশী’ বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর এই সফর হবে ‘ঐতিহাসিক’। অার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মোদি ঢাকায় আসার এক সপ্তাহ আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে যে এখনই তিস্তা চুক্তি সই হচ্ছে না। তবে অভিন্ন নদীটির পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সইয়ের বিষয়ে যৌথ ঘোষণায় ভারতের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের দর-কষাকষি। সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মোদির আশ্বাসে ভরসা রেখেছে বাংলাদেশ। তিস্তা নিয়েও একই পথে হাঁটার পক্ষপাতি বাংলাদেশ।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দুই দিনের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি জোরদার করা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর ভারতের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতার ওপরই বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত বৃহস্পতিবারের জঙ্গি হামলার পর সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর যে তাগিদ থাকবে, সেটি বলাই বাহুল্য।
এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ সুগম করতে দুটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। যোগাযোগ অবকাঠামো ও সামাজিক খাতে উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে নতুন করে ২০০ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা দেবে ভারত।
গতকাল দায়িত্বশীল সরকারি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় এ বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ থাকছে। আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষ হলেও যৌথ ঘোষণা কাল রোববার প্রচার করা হবে। যৌথ ঘোষণায় ৬০টির বেশি দফা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
যেসব চুক্তি সই হতে যাচ্ছে এ সফরে: দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের পর প্রায় ২০টির মতো চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, প্রটোকল ও সম্মতিপত্র সইয়ের কথা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিএসটিআই ও বিআইএসের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি, ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিসের চুক্তি ও প্রটোকল, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিসের চুক্তি ও প্রটোকল, বাংলাদেশ ও ভারতের কোস্ট গার্ডের মধ্যে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), মানব পাচার রোধবিষয়ক এমওইউ, জাল নোট রোধবিষয়ক এমওইউ, ২০০ কোটি ডলারের ঋণবিষয়ক এমওইউ, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক অর্থনীতির সহযোগিতাবিষয়ক এমওইউ, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারবিষয়ক এমওইউ, আখাউড়ায় ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ লিজ বিষয়ে বিএসএনএল ও বিএসসিসিএলের মধ্যে এমওইউ, বাংলাদেশে লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের (এলআইসি) কার্যক্রম শুরু নিয়ে সম্মতিপত্র, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি।