জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : খালেদার লিভ টু আপিল খারিজ
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৫:৩১,অপরাহ্ন ৩০ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ(চার্জ) গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা লিভ টু পিল(আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রোববার সকালে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
এর ফলে দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার করা সব মিলিয়ে ৫টি আপিল ও লিভ টু আপিলই খারিজ হয়ে গেলো উচ্চ আদালতে। ফলে বিচারিক আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রম চলতে আর কোনো বাধা রইলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন ও অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা অপর দুই লিভ টু আপিলও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
তারও আগে এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও আরও দু’টি রিট আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন খালেদা। তার সেই দুই আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।
রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৩ এ খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। বিচারিক আদালতে বেশ কয়েকবার পেছানোর পর সোমবার (১ ডিসেম্বর) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রথম সাক্ষী ও বাদীর অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতি মামলা করে দুদক। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট করেন। এ রিটের শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল নামঞ্জুর ও রিট খারিজ করে দেন। ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন খালেদা।
অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
বিচারিক আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মোট ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পরে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে দু’টি মামলায় দু’টি রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট গত ২৩ এপ্রিল এ রিট আবেদন খারিজ করে দিলে আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি।
গত ১৭ নভেম্বর থেকে এ তিন আপিলের শুনানি একসঙ্গে শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ১৭ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এসব লিভ টু আপিলের শুনানি করেন খালেদার আইনজীবী খোন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
গত ১৪ অক্টোবর চেম্বার বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আপিল তিনটির শুনানির জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ২৩ অক্টোবর এ তারিখ এগিয়ে (পরিবর্তন) আনার জন্য আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৬ অক্টোবর এ আবেদন মঞ্জুর করে শুনানি এগিয়ে ৬ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ।
পরে ৯ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা পেছাতে সময়ের আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি পিছিয়ে ১৬ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত। ১৭ নভেম্বর কার্যতালিকায় এলে শুনানি শুরু হয়।
খালেদার পাঁচটি আপিল ও লিভ টু আপিল সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেওয়ায় বিচারিক আদালতে দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে আসামিপক্ষ বলছেন, তারা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আরও একটি রিট করেছেন গত ১৩ অক্টোবর, যার শুনানি অপেক্ষমান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রথম সাক্ষী বাদী হারুন অর রশিদের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সোমবার (১ ডিসেম্বর) তার অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা অপর মামলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও তিনি বাদী ও প্রথম সাক্ষী। একই আদালতে এ মামলায়ও সাক্ষ্য দেবেন তিনি।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে খালেদাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকেই অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
খালেদা ছাড়া জিয়া অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
গত ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
তবে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিচার শুরুর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নেন খালেদা জিয়া। আর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর নানা কারণ দেখিয়ে আবেদন জানিয়ে পিছিয়ে নিয়েছেন আরও আরও চার দফায়।
গত ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ-আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই দুই মামলা পরিচালনার জন্য ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।