জিহাদের দাফন সম্পন্ন : দোষীদের বিচার দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৯:১৮,অপরাহ্ন ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট নাগেরপাড়া বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জিয়াউর রহমান জিহাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোণীতে ওয়াসার পরিত্যাক্ত পানির পাম্পের পাইপের মধ্যে পড়ে যায় মতিঝিল স্কুল এন্ড কলেজের নিরাপত্তা কর্মী নাসির উদ্দিনের ৪ বছরের শিশু জিহাদ। এরপর তার মৃত্যু হয় ওই কুপেই। রবিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে একটি প্রাইভেট এমবুলেন্স যোগে জিহাদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসে। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট লাশ নিয়ে স্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর হাজার হাজার জনতা জিহাদকে এক নজর দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রথমে জিহাদের মরদেহ দেখানো শুরু করার কিছুক্ষন পর উপস্থিত লোকজন ভিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিম নিয়ন্ত্রন করতে হিমসিম খায়। পরে লাশ দেখানো বন্ধ কওে দ্রুত জানাজার ব্যবস্থা করে।
জানাজায় ইমামতি করেন নাগের পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদেও ইমাম ও খতিব মাওলানা জয়নুল আবদীন। সেখান থেকে তার গ্রামের বাড়ী পূর্বের চর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। গ্রামের বাড়িতে থাকা তার পরিবারের লোকজন দাদা সহ আত্মীয় স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সেখানে চলে এক শোকের মাতম। লাশের সাথে আসা বাবা নাসির উদ্দিন ও মা খোদেজা এখন নির্বাক তারা কিছুই বলতে পারেছন না। তাদের আহজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। লাশ বাড়ি আসার পূর্বে জিহাদের মরদেহ ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া এলাকার ফোপরার পাড় গ্রামে তার নানাবাড়ি নিয়ে যায়। সেখানে এক জামাজে জানাযা অনুষ্টিত হয়। রবিবার বিকেল সোয়া ৫টা ২০ মিনিটে নাগেরপাড়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আত্মীয় স্বজন, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস, সহকারী পুলিশ সুপার সুমন দেব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বেগম, ওসি মোফাজ্জেল হোসেনসহ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীগন, জনপ্রতিনিধি এবং হাজার হাজার লোকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে পূর্বেরচর নিজ বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়।
রবিবার সকাল থেকেই সাদা পোষাকের ২ জন পুলিশ আক্কেল আলী ও মিজানুর রহমান জিহাদদের বাড়িতে অবস্থান করে। এ দিকে রোববার সকাল থেকে নাগেরপাড়া বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাইকিং করে জিহাদের লাশ আসার খবর জানিয়ে দেয়। মাইকের খবর শুনে লোকজন জড়ো হতে থাকে। লাশ পৌছানোর পর উত্তেজিত জনতা দোষীদের বিচার দাবী করে বিক্ষোভ করে। এবং সেখানে যথাযথ পুলিশী নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করে।
জনতার বিক্ষোভের কারণে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস জিহাদের দাফনের জন্য পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন ১০ বছর পূর্বে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যান। তিনি শাহজাহানপুর কলোনীতে স্বপরিবারে বসবাস করেন। নাসির উদ্দিনের ৩ সন্তানের মধ্যে জিহাদ ছিল সবার ছোট। জিহাদের বড়বোন স্বর্ণা ঢাকার একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, আরেক ভাই জিসান এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। শুক্রবাবার বিকেলে ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোণীর মৈত্রী সংঘ মাঠের পাশে ওয়াসার পরিত্যাক্ত পানির পাম্পের পাইপের ৪০০ ফুট গভীরে পড়ে যায় মতিঝিল স্কুল এন্ড কলেজের নিরাপত্তা কর্মী নাসির উদ্দিনের সাড়ে ৩ বছরের শিশু জিহাদ।
জিহাদের চাচাত দাদি মমতাজ বেগম বলেন, পাইপটি ঢেকে রাখলে আমার নাতি মরতোনা। যারা পাইপটি খোলা রেখেছে তাদেও বিচার চাই। জিহাদের দাদা আ. আজিজ ফকির বলেন, সরকারের সদইচ্ছা থাকলে আমার নাতি কলিজার টুকরা জিহাদকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। জিহাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ জিহাদের বাবা ও তার পরিবারকে হয়রানি করেছে। আমি এর বিচার চাই। জিহাদের মা খাদিজার কাছে সাংবাদিকরা বার বার প্রশ্ন করার পর নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কোন উত্তর দেননি। জিহাদের নানা হোসেন আলী মোল্যা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নাতির শোকে বার বার মূছা যাচ্ছেন আর বলছেন আমার ভাইকে এনে দাও। গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন্নাহার বেগম বলেন, লাশ দাফনের জন্য সরকারী ভাবে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শোক সন্তপ্ত পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।