জামায়াত ও তাজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আদেশ ১২ জানুয়ারি
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৩:৪১,অপরাহ্ন ০৫ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ের পরে হরতাল এবং রায় নিয়ে মন্তব্য করায় সংগঠন হিসেবে জামায়াত, আমীরসহ তিন জামায়াত নেতা, দুই শিবির নেতা এবং অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১২ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বে তিন সদেস্যর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন ও অভিযুক্ত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য এই দিন ঠিক করেছেন।
আজ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকউশন ও আদালত অবমাননার অভিযোগ গঠন করার পক্ষে শুনানি করেন জেয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজ। অপর দিকে জামায়াত ও আইনজীবী তাজুলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী এবং তাজুল ইসলাম নিজে তার বিষয়ে আদালত অবমাননা হয়নি মর্মে মৌখিক জবাব দেন।
এর আগে এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ের পরে ঢাকা হরতাল এবং রায় নিয়ে প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় সংগঠন হিসেবে জামায়াত, সংগঠনের আমীরসহ তিন জামায়াত নেতা, দুই শিবির নেতা এবং অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসিকিউশন।
গত ১ জনুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্টার বরাবর ৪৯ পৃষ্ঠার এসব লিখিত অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্তের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের টিম।
এর আগে গত বুধবার ৩১ ডিসেম্বর তাজুলের বক্তব্য ট্রাইব্যুনাল-১ এ তুলে ধরা হলে ট্রাইব্যুনাল লিখিত আকারে তথ্য-উপাত্তসহ এসব অভিযোগ জমার নির্দেশ দেন। পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুসারে পরের দিন বৃহস্পতিবার এসব অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দেয়া হয়।
অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান।
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর বুধবার ও ১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দু’দিনের হরতাল ডাকে জামায়াত।
নিজ নিজ বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরূপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদের নেতারা।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’।
১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল, রেজিয়া সুলতানা চমন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ডিফেন্সের যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।
জামায়াতের এই আইনজীবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার এবং কেউ আবার দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি।
তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলা হতো তাতে সুবিচার হতো।
এসব সাক্ষ্য-প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড হওয়া দূরের কথা, এসব অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনের জরিমানা হওয়ার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’ তাজুলের এমন বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে।
তাজুল জামায়াত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা হিসেবে কাজ করছেন এবং ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপবাদ ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর তাজুলের বক্তব্যের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
প্রসিকিউটর মালুম বলেন, জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের রায়ের পর আসামিপক্ষ থেকে তাজুল ইসলাম যে বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ও শব্দচয়ন করেছেন তা মোটেই আইনজীবীসুলভ ছিল না। এ অভিযোগ শুনে প্রসিকিউশনকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করার পরামর্শ দেন ট্রাইব্যুনাল। সে হিসেবে বুধবার তাজুল ইসলাম, সংগঠন হিসেবে জামায়াত, সংগঠনের আমীরসহ তিন নেতা ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারী জেনারেল এই মোট সাত জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
মালুম বলেন, ‘আমি মনে করি, তার এই বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত। জামায়াত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব ছড়ানো হচ্ছে। তাজুল এর আগেও দুবার ট্রাইব্যুনাল অবমাননা করে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের নেতা এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দু’টিতে ২৫ ও ৫ বছর করে আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির(উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। প্রমাণিত না হওয়া বাকি একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় এটিএম আজহারের পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।