জামায়াতের বিচারে অাইন চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায়
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৫:৫৮,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য করা খসড়া অাইন এ মাসের মধ্যেই মন্ত্রিসভায় উঠবে। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন অাইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট অানিসুল হক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই খসড়া অাইনটি অাইন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানুয়ারির শেষ ধাপে এটি উঠবে বলে অাশা করছি।
অাইনমন্ত্রী অানিসুল হক বলেন, অান্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) অাইন ‘৭৩ এ অপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব নয় অামি যখন বললাম তখন অনেকেই অামাকে নানাভাবে ভুল বুঝেছেন, গালমন্দ করেছেন। কিন্তু অামি যদি তখন অন্যায় করে থাকি, তাহলে দেশের উপকারে করেছি, অপকারে নয়। তবে অামি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, অামি কোনও অন্যায় করেছি।
কারণ, যদি বিদ্যমান অাইনে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করা হতো তাহলে এটি ধোপে টিকতো না অার তখনতো অামাদের অাইন পরিবর্তন করার কোনও সুযোগও থাকতো না।
তাহলে কেন অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন তদন্ত করে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছিল জানতে চাইলে অাইনমন্ত্রী বলেন, অামি তাদের বারবার বলেছি এটি না করতে। সবকিছু ইমোশনে (অাবেগ) করা যায় না।
গত বছরের জুন মাসে তৈরি করা খসড়াটি ঈদুল ফিতরের পরপরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার কথা ছিল। কিন্তু বারবার কোনও এক অজানা কারণে সেটি পিছিয়েছে।
এর অাগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ট্রাইব্যুনালস আইনের তৃতীয় সংশোধনী সংসদে পাস করা হয়। এতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষের আপিলের সমান সুযোগ রাখা হয়। তবে এই সংশোধনীতে সংগঠনের বিচারের সুযোগ তৈরি করা হলেও সংগঠন দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি কী হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।
খসড়া অনুমোদন হলে বিদ্যমান ট্রাইব্যুনালস আইনের ২০(২) ধারায় যোগ হবে, ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন এবং এই নামে বা অন্যকোনও নামে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। পাশাপাশি মামলার বিষয়বস্তু সাপেক্ষে সংগঠনটির সদস্যদেরও ট্রাইব্যুনাল সাজা দিতে পারবেন।
বর্তমানে এ ধারায় শুধু ব্যক্তির সাজার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আইনের ৪ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, কোনও সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি অথবা কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক বা স্থানীয় কমিটির সদস্য যদি অপরাধ করেন, তাহলে ওই অপরাধের জন্য সদস্যের পাশাপাশি সংগঠনও দায়ী হবে।
সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ওই নামে বা অন্য নামে কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এ সংশোধনীর কার্যকারিতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে।
অাইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খসড়ায় বিদ্যমান আইনের ১০টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি ধারায় শুধু ব্যক্তি শব্দের পাশাপাশি সংগঠন শব্দটি বসেছে। খসড়ার ২০ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন এবং এর নিজ নামে বা অন্য কোনও নামে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। পাশাপাশি মামলার বিষয়বস্তু সাপেক্ষে সংগঠনটির সদস্যদেরও ট্রাইব্যুনাল সাজা দিতে পারবেন।
খসড়ায় ৪ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, কোনও সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি অথবা কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক বা স্থানীয় কমিটির সদস্য যদি অপরাধ করেন, তবে ওই অপরাধের জন্য সদস্যের পাশাপাশি সংগঠনও দায়ী হবে।
এদিকে ২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। গত বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় এবং মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ্য, অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়েও জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে অাখ্যা দিয়েছেন। জামায়াতের অামির গোলাম অাযমের রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, দালিলিক প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধী সংগঠনের মতো কাজ করেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
তারও আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচটি রায়ের মধ্যে চারটিতেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে পাকিস্তানি সেনাদের ‘সহযোগী বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি জামায়াতকেও দায়ী করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছে, একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বার্থে এ ধরনের স্বাধীনতাবিরোধীদের সরকারের কোনও নির্বাহী পদে, সামাজিক ও রাজনৈতিক দলে এবং সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনে কোথাও ঠাঁই দেওয়া উচিত নয়। লাখ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়ার ক্ষেত্রে এসব উচ্চ পদে এই স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে কোনওভাবেই আসীন না হতে পরে, সেজন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর অামির মতিউর রহমান নিজামীর রায়েও অান্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র সংঘ, আলবদর ও রাজাকার বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুণ্ঠনসহ যেসব অমানবিক অপরাধ করেছে, সেগুলো পবিত্র কোরআন ও হাদিস অনুমোদন করে না।
এর আগে জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামানের রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ বলেন, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর মস্তিষ্কপ্রসূত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালে ‘পাকিস্তানরক্ষা’র নামে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় আলবদর বাহিনী, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের ‘অ্যাকশন সেকশন’ বা ‘আর্মড উইং’।
কাদের মোল্লা ও আযাদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ পর্যবেক্ষণ করেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ ও আধা সামরিক (প্যারামিলিটারি) বাহিনী আলবদর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারাও নৃশংস অপরাধ ঘটায়। ওই দুটি রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে ছাত্র সংঘের সদস্য ও জামায়াতের প্রশিক্ষিত রুকনদের দিয়ে আলবদর নামের আধা সামরিক বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়েছিল।