জামাতকে নিষিদ্ধ করার ফল ভুগতে হবে, মেহবুবা মুফতির হুঁশিয়ারি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৪:০০,অপরাহ্ন ০৩ মার্চ ২০১৯
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে জামাত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ করছে ভারত সরকার। বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জামাত-ই-ইসলামির জম্মু ও কাশ্মীর শাখাকে দেশবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আগামী ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফল ভুগতে হতে পারে। প্রতিশোধ নিতে কাশ্মীর উপত্যকায় যে কোনো রকম ঘটনা ঘটাতে পারে জামাত। শনিবার পিডিপি সদর দফতরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
পুলওয়ামা হামলার পর উপত্যকার সুরক্ষা বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। একে একে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জামাত-ই-ইসলামির জম্মু-কাশ্মীর শাখাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসবের পর কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি ফেরার বদলে অশান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি।
তিনি বলেন, ‘জামাত-ই-ইসলামি সে অর্থে জঙ্গি সংগঠন নয়। এর নির্দিষ্ট সামাজিক এবং রাজনৈতিক আদর্শ আছে। কোনো আদর্শকে এভাবে দমন করা নিন্দনীয়। জামাতের তরুণ সদস্যদের গ্রেফতার করে কোনো লাভ হবে না। বরং তাদের প্রতিশোধস্পৃহা আরও বেড়ে যাবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।’
জামাতকে দরিদ্রদের বন্ধু সংস্থার তকমা দিয়ে সরাসরি তাদের পাশেই দাঁড়ালেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বিজেপিকে একহাত নিয়ে মুফতি আরও বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আরএসএস, শিবসেনা, জনসংঘ – এরা আছে। যারা কেবলমাত্র মাংসাশী সন্দেহে গণপ্রহার করেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আর জামাত তো উপত্যকায় গরীব মানুষদের সাহায্য করে। স্কুল তৈরি করে ছোট বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়। আর তাদেরই আপনারা ধরে ধরে জেলে পুরে দিতে চাইছেন। এর ফল কিন্তু ভয়ঙ্কর হবে। দয়া করে জম্মু-কাশ্মীরকে জেলে পরিণত করবেন না।’
জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার ভেঙেছে একাধিক কারণে। আপাতত সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি।জোট ভাঙার নেপথ্যে একাধিক কারণের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল,প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও উপত্যকায় একচুল শান্তি ফেরাতে পারেনি বিজেপি।বিশেষত জনসংযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন নেতারা। বরং সাধারণ নাগরিকের ভরসার জায়গা আরও ভঙ্গুর হয়েছে। এসব নিয়ে পিডিপির সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে যথেষ্ট তলানিতে।
সুযোগ পেলেই পিডিপি কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপের সমালোচনা করে। পুলওয়ামা হামলার পরও সেই বিদ্বেষ আরও তীব্র হয়েছে। এমনকী বিমান বাহিনীর অভিযানের পরও যখন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্র, তখনও মতৈক্যের সুর কেটে দিয়েছিলেন মুফতি। এরপর সরাসরি জামাতের পাশে দাঁড়িয়ে তার এই বক্তব্য স্বভাবতই কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের।
মুফতির কথায়, ‘কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি জোট থাকতে আমরা বিজেপিকে যা খুশি তাই করতে দিইনি। কিন্তু এবার আর তা হচ্ছে না। একজন কাশ্মীরি মার খেলে, বাকিরা আনন্দ পাচ্ছেন।’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কাশ্মীর উপত্যকায় জামাতের সমর্থন পিডিপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একেবারে লোকসভা নির্বাচনের আগমুহূর্তে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ভোট ব্যাংকে খরা দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কায় পিডিপি প্রধানের এমন হুঁশিয়ারি।