জমি গাড়ি জনবল সংকট নিয়ে ৩৭-এ পা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৫:২৭,অপরাহ্ন ৩০ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
জনবল, যানবাহন সংকট এবং পরের জমিতে সদর দপ্তর নিয়েই প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর পার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। রোববার ৩৬ বছর পূর্ণ করে ৩৭ বছরে পা দিচ্ছে বন্দরনগরীর ৬০ লক্ষ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর সিএমপি’র যাত্রা শুরু হয়। তখন চট্টগ্রামের লোকসংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ। তখন ৩০০ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ হিসাবে তিন হাজার ৬২২ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
সিএমপি’র হিসাবমতে, বর্তমানে নগরীতে প্রায় ৬০ লক্ষ লোকের বসবাস। আর নগরীতে পুলিশ আছে ৫ হাজার ৬’শ জনের মত। সিএমপি’র হিসাবে বর্তমানে নগরীতে প্রতি এক হাজার দু’শ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
সিএমপি কমিশনার মো.আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, জনবল এবং যানবাহন এ মুহুর্তে আমাদের প্রধান সংকট বলে আমি মনে করি। জনবল বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। আর যানবাহনের সংকট কাটাতে সহযোগিতার জন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ি সংগঠন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আহ্বান জানিয়েছি।
জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া মিলছেনা
প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পর ১৯৯০ সালে সিএমপিতে পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয় মাত্র ২৪৮ জন। ২০০০ সালে পুলিশের সংখ্যা ৮৭৯ জন বাড়িয়ে চার হাজার ৫৪৯ জন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে ৪৩০ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে সিএমপিতে পুলিশ ও সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারি (সিভিল) মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৭৮৫টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে আবার তিন’শরও বেশি পদ শূন্য আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নগর পুলিশ কমিশনার মো.আব্দুল জলিল মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, বার’শ মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ কাজ করছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি আরও বেশি পুলিশ থাকত তাহলে মানুষ ডাকলেই আমরা হাজির হতে পারতাম। এখন মানুষের ডাকে সেভাবে হয়ত সাড়া দিতে পারছিনা।
নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, জনবল স্বল্পতার কারণে পুলিশের নিয়মিত টহল দেওয়া, মামলা তদন্ত, স্পর্শকাতর ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন সম্ভব হচ্ছেনা।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নিয়মিত কাজ চালানোর জন্যও প্রয়োজনীয় পুলিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। শিল্প পুলিশ, এপিবিএন থেকে ধার করে এনে নিয়মিত কাজ চালাতে হচ্ছে।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগর পুলিশে আরও চার হাজার ৯৪৫ জন পুলিশ এবং ২১০ জন সিভিল কর্মকর্তাসহ পাঁচ হাজার ১৫৫ জন যুক্ত করার সুপারিশ করে একটি প্রস্তাব সিএমপি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। তবে জনবল বাড়ানোর এ প্রস্তাবে গত ১০ মাসেও সাড়া মেলেনি।
প্রস্তাবে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার দুজন, উপ-পুলিশ কমিশনার ছয়জন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ৩৩ জন, সহকারী পুলিশ কমিশনার ৬২ জন, পরিদর্শক নিরস্ত্র ১৮ জন, পরিদর্শক সশস্ত্র ২৫ জন, পরিদর্শক টহল ৬ জন, উপপরিদর্শক নিরস্ত্র ৩৫৪ জন, উপরিদর্শক সশস্ত্র ৩৪ জন, সার্জেন্ট ১৫৬ জন, উপপরিদর্শক (ট্রাফিক) ১২ জন, সহকারী উপপরিদর্শক নিরস্ত্র ৪৯৯ জন, সহকারী উপপরিদর্শক সশস্ত্র ১০৮ জন, নায়েক ৬৯ জন, কনস্টেবল তিন হাজার ৫৫৯ জন নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) এ কে এম শহীদুর রহমান বলেন, প্রস্তাবটি এখনও অনুমোদন দেয়া হয়নি। সারাদেশে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের একটি প্রস্তাব বিবেচনাধীন আছে। সম্ভবত সেখান থেকে চট্টগ্রামে বাড়তি জনবল দেয়া হবে।
গাড়ির জন্য ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ সিএমপি
চার ভাগের এক ভাগ যানবাহন দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। পদস্থ কর্মকর্তা, থানা, ফাঁড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রিজন ভ্যান, বাস, ট্রাক, রেকার, রায়ট ভ্যান, মোটর সাইকেলসহ সিএমপিতে গাড়ি প্রয়োজন ৯৯১টি। অথচ বর্তমানে তাদের মাত্র ২৭০টি গাড়ি সচল আছে। এর মধ্যে আবার তিন ভাগের এক ভাগ গাড়ি লক্করঝক্কর মার্কা বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।
যানবাহন সংকট কাটাতে ২০১২ সালে সিএমপি’র পক্ষ থেকে ৪৩০টি যানবাহন চেয়ে একটি প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাব অনুসারে মাত্র ৫০টির মত গাড়ি পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ অবস্থায় সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল গাড়ি চেয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। সিএমপি কমিশনারের অনুরোধে ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ তিনটি পেট্রল ভ্যান দিতে সম্মত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব গাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম শহীদুর রহমান।
সিএমপি কমিশনার মো.আব্দুল জলির মণ্ডল বলেন, আমাদের বিজিএমইএ তিনটি গাড়ি দিচ্ছে। রিহ্যাবের কাছেও আমরা গাড়ি চেয়েছি। চট্টগ্রাম বিত্তবান মানুষদের সবার কাছে আমাদের গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর আয়তন বেড়েছে। নগরীতে অনেক ঘিঞ্জি এলাকা আছে। গাড়ি ছাড়া সেসব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু গাড়ির অভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
এখনও পরের জমিতে
১৯৭৮ সালে সিএমপি প্রতিষ্ঠার সময় জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন পরীর পাহাড়ে সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের সেই জমিতেই গত ৩৬ বছর ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে সিএমপি।
সিএমপি সূত্রমতে, গত ছয় বছরে সিএমপিতে অতিরিক্ত কমিশনার, উপ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ কমিশনার ও সহকারি কমিশনার পদ বেড়েছে কমপক্ষে ১৫টি। সদর দপ্তরের নিজস্ব ভূমি না থাকায় নতুন কোন ভবনও নির্মাণ করা যাচ্ছেনা। ফলে পদস্থ কর্মকর্তা এবং তাদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার জন্য জায়গার সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিএমপিকে।
নিজস্ব ভূমি না থাকায় বাকলিয়া ও হালিশহর থানার কার্যক্রম চলছে ভবন ভাড়া করে। বন্দর ও খুলশি থানার কার্যক্রম চলছে পুরনো ফাড়িতে। সদরঘাট থানার কার্যক্রম চলছে ট্রাফিক বিভাগের জায়গায় একটি টিনশেড ঘরে।
সিএমপি কর্মকর্তারা জানান, জেলা প্রশাসন বারবার সদর দপ্তরকে জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললেও কার্যত এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি হচ্ছেনা। মূলত পুরো বিষয়টি নির্ভর করছেন জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছার উপরই।