জব্বারের জরিমানাসহ আমৃত্যু কারাদণ্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৮:৪৯,অপরাহ্ন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরে পলাতক পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
জব্বারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের সবকটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। রায়ে আনা অভিযোগের মধ্যে এক, দুই, তিন এবং পাঁচে মৃত্যুদণ্ড চার নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন রায়ে। বয়সের বিবেচনায় তাকে এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় এই রায় ঘোষণা করেন।
তার আগে রায় পাঠ শুরু করেছেন সদস্য বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। পরে জব্বারের বিরুদ্ধে রায় পাঠ করবেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং শেষ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
রায়ে ১শত ৪১ পৃষ্ঠা রয়েছে। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে এজলাসে আসন গ্রহণ করেন বিচারপতিরা। রায় পাঠ শুরু করেন তার কয়েক মিনিট পর।
রায় পাঠ শুরু করার আগে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, উপস্থিত চিফ প্রসিকিউটর, সুধীজন ও সাংবাদিকবৃন্দ আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি। আজকের এই দিনে ২০১৩ সালে আমি এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাঁচটি রায় এবং তার আগে অত্র ট্রাইব্যুনালে আরো তিনটি মিলিয়ে মোট ৮ টি রায় ঘোষণা করা হবে।
তার আগে গত বছর ৩ ডিসেম্বর এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। এটি হবে উভয় ট্রাইব্যুনালে মিলে ১৭ তম রায় এবং ট্রাইব্যুনাল-১এ ঘোষিত ৮ম রায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি অষ্টম রায়।
সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল উক্ত মামলায় রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেন। সে হিসেবে আজ এই রায় ঘোষণা করা হবে।
প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। প্রসিকিউটরের দাবি আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির হবে। ট্রাইব্যুনালে জব্বারের পক্ষে মামলায় শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আবুল হাসান।
জব্বারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতবছর ১৪ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ১৭ নভেম্বর শেষ হয়। জব্বারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ২৪ জন সাক্ষী। তাদের মধ্যে ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন ২২ জন।
গত বছর ৮ জুলাই ট্রাইব্যুনালের এক আদেশে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্বারকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির হননি জব্বার। এ জন্য তাকে পলাতক ঘোষণা করা হলো। আবুল হাসানকে মামলায় পলাতক আসামি পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
এর আগে গত ১২ মে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনীত পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এ আসামি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন বলে তদন্ত সংস্থা সূত্র জানায়। গতবছর ১১ মে এ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তকরণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ।
মামলাটি তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. হেলাল উদ্দিন। জব্বার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সময় পাক বাহিনীর সহযোগী মঠবাড়ীয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।