ছয় কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির পক্ষে বিবৃতি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫২:৩০,অপরাহ্ন ১০ জানুয়ারি ২০১৫
অনলাইন ডেস্ক:: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়জন কংগ্রেসম্যানের নাম ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ভুয়া বিবৃতি তৈরি করা হয়েছিল। ‘ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ কমিটির চেয়ারম্যান এডোয়ার্ড রয়েসের অফিসিয়াল প্যাডের অনুরূপ কাগজে বানোয়াট বিবৃতিটিতে কংগ্রেসম্যান এডোয়ার্ড রয়েস, এলিয়ট এঙ্গেল, স্টিভ শ্যাবট, যোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেং-এর স্বাক্ষরও দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিবৃতিকে ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ধরা পড়ে জালিয়াতি। এ ঘটনায় গতকাল মার্কিন হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো পক্ষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভুয়া বিবৃতি ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
গতকাল বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার মুদ্রণ সংস্করণে এবং বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দুটি অনলাইন সংবাদ পোর্টালে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের নামে বিবৃতিভিত্তিক সংবাদ প্রচার হয়। কংগ্রেসম্যানরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা জানিয়েছেন বলে বানোয়াট বিবৃতিতে দাবি করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো বিবৃতি হাউস কমিটির ওয়েবসাইটে পাওয়া না যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি সাংবাদিকরা কংগ্রেসম্যানদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সাংবাদিকদের কথা শুনে কংগ্রেসম্যানরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে জানতে পারেন মিথ্যা ও বানোয়াট বিবৃতির কথা। গতকাল হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রচারিত বিবৃতির মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান কমিটির চেয়ারম্যান রয়েস ও কংগ্রেসম্যান অ্যাঙ্গেল। কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘ছয় কংগ্রেস সদস্যের নামে ৭ জানুয়ারির যে বিবৃতির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের কিছু সংবাদ মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা বানোয়াট। পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি ও কংগ্রেসম্যানদের অনেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ করে এলেও কমিটি বা কোনো সদস্য এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেননি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে বানোয়াট বিবৃতি ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বৈদেশিক দূত পরিচয় দেওয়া প্রবাসী বিএনপি নেতা জাহিদ এফ সরদার সাদী এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তিনিই বিবৃতিটি বিভিন্ন নামের ই-মেইল ব্যবহার করে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠিয়েছেন। জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গত ৯ বছরে ২৭ বার গ্রেফতার হওয়া সাদী সেদিন যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরি হাউসে ইস্যুটি উত্থাপন করেন। কিন্তু হাকিম জেফরিও পরে এ তথ্য অসত্য বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিবৃতিকে ভিত্তি করে প্রচারিত প্রতিবেদনে প্রবাসী বিএনপি নেতা ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার এবং জাহিদ এফ সরদার সাদীর তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তারা দুজনই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দুই বৈদেশিক দূত।বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করা জাহিদ এফ সরদার সাদী ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে দুই ডজনের বেশি প্রতারণার মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে সাজাও খেটেছেন। অ্যারিজোনায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার একটি মামলার নথিতে দেখা যায়, সাদী কখনো সরদার জাহিদ ফারুক, কখনও সরদার ফারুক, এস ফারুক, আবার কখনো ফারুক সরদার নাম নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে এসেছেন। নিউইয়র্ক বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সাদীকে বিএনপির বৈদেশিক দূত এবং বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিও : কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচারের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিও ক্ষুব্ধ। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ আবদুল লতিফ সম্রাট বলেন, ‘জালিয়াতি ও ধাপ্পাবাজ লোকজন যদি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই থাকেন তবে নিকট ভবিষ্যতে প্রবাসে সত্যিকারের কোনো কর্মী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সময় থাকতে এ ধরনের চিহ্নিত লোকজনকে বহিষ্কার করা উচিত।