ছাতক সিমেন্ট কারখানার কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:৪৩,অপরাহ্ন ২৮ মে ২০১৫
সিলেট প্রতিনিধি::
দেশের প্রথম ও একমাত্র রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন ‘বিসিআই’ এর অন্তর্ভূক্ত ৭৫ বছরের পুরাতন ছাতক সিমেন্ট কারখানা দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লুটপাটের কারনে ধ্বংস হতে যাচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সরলতার সুযোগ নিয়ে কারখানায় দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছেন ডেপুটি প্রকৌশলি আব্দুর রহমান বাদশা ও তার সহযোগী সিবিআই নেতা আব্দুল কুদ্দুছসহ আরো অনেক কর্মকর্তাগণ। এমনটাই দাবি করছেন “ছাতকের সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জনগণ”
তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘকাল থেকে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে রাজস্ব হিসাবে কোটি টাকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র নজরদারির অভাবে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কারনে কারখানার মেশিনারী গুলো প্রায় বিকল হতে চলছে।
নাগরিক সমাজ আরো দাবি করেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ কারখানার কোন প্রকার অভার হলির কাজ না করায় উৎপাদন ও বিপনন ধারাবাহিক ভাবে হ্রাস পেতে থাকে। অসাধু কর্মকর্তাগণ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে কারখানার জন্য নিম্ন মানের যন্ত্রাংশ অধিক দামে ক্রয় করে ও নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়, কারখানার কোয়ার্টার বহিরাগত লোকের কাছে ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
তারা উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে ৫১৬ টা সিমেন্ট কারখানার মেরামত কাজ ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্রাসারের ফ্লাই হুইল মেরামত, ৫২১ সিমেন্ট মিল অভার হেড ক্রেইন ও কিলনের অনেক গুলি কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হলেও তার ভাল কোন সুফল পাওয়া যায়নি। যন্ত্রাংশ বুয়েট থেকে পারীক্ষা করার কথা থাকলেও প্রতারণার মাধ্যমে ভালো রিপোর্ট দেখিয়ে কারখানার সংযোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে সরকারের কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়।
এনিয়ে বিগত বছর গুলো স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাগুলোতে অনেক লেখালেখি হলেও বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এতে করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অতাত করে টাকা ভাগাভাগির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনা টেন্ডারে তালিকাভূক্ত টিকাদারদের মাধ্যমে সামান্য পরিমানের কাজ করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বিল বানিয়ে ভাগাভাগি করে নিয়ে যান।
তারা আরো অভিযোগ করেন, ১৫ কোটি টাকার পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হলেও অজ্ঞতার কারনে কোন কাজ সুষ্ঠ হচ্ছে না। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা ২০ কোটি টাকায় কারখানার সকল মেশিনারী অভার হলিং করা সম্ভব ছিলো।
তারা আরো জানান, এইচ.ই.সি কিলনের ৩নং ও ৪নং ফাউন্ডেশনের ৩ মিটার করে ২ পিছ সেল ঝাকিয়ে যাওয়ায় তা মেরামতের জন্য কেটে ঢাকা আনা নেওয়া ও হিট দিয়ে বাকা অংশ সোজা করার জন্য ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যা কোন ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বর্তমানে কারখানার অর্থিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে শ্রমীকদের বেতন ভাতা যথা সময় পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অবসর ও মৃত্যুজনিত কারনে শ্রমীক-কর্মচারীদের পাওনা সময় মতো পরিশোধ না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। অথচ কারখানার হিসাব বিভাগ ঠিকাদার ও সাপ্লাইয়ার্সদের বিল সময় মতো পরিশোধ করছেন। এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা খুবই সংক্ষুব্ধ।
চলতি বছরে কারখানার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১ লক্ষ ২০ হাজার মে: টন নির্ধারন করা হলেও ২০ এপিল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার মে: টন। বিগত ৪ বছর ধরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় শ্রমিকরা উৎসাহ বোনাস থেকে বঞ্চিত।
এ ব্যাপারে ডেপুটি প্রকৌশলি আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, এসবের সাথে তিনি জড়িত নন। তার উপর আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা।
অন্যদিকে, সিবিআই নেতা আব্দুল কুদ্দুছ নিজেকে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক দাবি করলেও তিনি নির্বাচিত কোন সম্পাদক নন বলে দাবি করছেন নাগরিক সমাজ।
এ ব্যাপারে আব্দুল কুদ্দুছের সাথে যোগাযোগ করলে তার ফোনে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।