চোরাচালানিরা অক্ষত, ধরা পড়ে বাহকেরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৭:১২,অপরাহ্ন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
গত শনিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশপরগণা জেলার স্বরূপনগর এলাকায় বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে তিন বাংলাদেশি যুবক। বিএসএফ’র দাবি, তারা ভারত থেকে গরু নিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেবার সময় ধরা পড়েছে। আটক তিন যুবকের সঙ্গে শনিবার সকালে বিএসএফ’র ১৪৪ ব্যাটেলিয়নের খৈজুড়ি কোম্পানিতে বসে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা জানায়, হাবিবউল্লাহ নামে এক গরুর বেপারি তাদের চারটি গরু নিয়ে যাবার জন্য ভারতে পাঠিয়েছে। গরু সীমান্ত পার করে দিতে পারলে তাদের প্রত্যেককে পাঁচ’শ টাকা করে দেয়া হত। কিন্তু এর আগেই তারা ধরা পড়ে গেছে। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যারা বিভিন্ন সময় আটক হয়, তাদের অধিকাংশই এদের মত সাধারণ দরিদ্র খেটে খাওয়া পরিবারের যুবক।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিএসএফ’র কোলকাতা সেক্টরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময় চোরাচালানি সন্দেহে যাদের আটক করেন তাদের অধিকাংশই বড় ধরনের ব্যবসায়ী কিংবা ধনী ব্যক্তি নন। তারা শুধুমাত্র দুই পাড়ের ব্যবসায়ীদের নির্দেশে গরু, ফেনসিডিল এবং বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য অবৈধভাবে সীমান্ত পার করানোর ক্ষেত্রে বাহক হিসেবে কাজ করেন। তবে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্তের ৩৮ ব্যাটেলিয়ন বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকশি বলেন, আমাদের সীমান্তে কেউ কখনও অবৈধ পণ্য আনা-নেয়ার সময় ধরা পড়েনি। মাঝে মাঝে বিএসএফ কাউকে কাউকে ধরে এনে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে যায়। বলা হয়, অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয়েছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ অনেক কারণে হতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা প্রমাণ না থাকলে কাউকে স্মাগলার কিংবা ক্যারিয়ার বলা উচিৎ নয়, বলেন আহমেদ বকশি। আটক তিনজন ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরু, ফেনসিডিল, ভোগ্যপণ্য চোরাচালানের ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেটের অধীনে কাজ করে শত, শত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। এদের কাজ শুধুমাত্র চোরাচালানের পণ্য সীমান্ত পার করে দেওয়া। আর বাহকরা সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় বিএসএফ’র প্রতিরোধ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায়।
বিএসএফ’র ১৫২ ব্যাটেলিয়নের সহকারি কমান্ড্যান্ট বিকাশ পাচোরি সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের চোরাচালানিদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগ অবশ্যই আছে। মাঝে মাঝে আমরা ভারতীয়দেরও হামলার শিকার হই। অভিযোগ আছে, চোরাচালানির সঙ্গে দুই দেশের লোকজন জড়িত থাকলেও বিএসএফ শুধুমাত্র বাংলাদেশিদেরকেই আটক করে। ভারতীয়দের বিষয়টি তারা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। কোন ঘটনা ঘটলে শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের বিষয়টিই সামনে আসে, ভারতীয় অপরাধীরা আড়ালে থেকে যান।
বিএসএফ’র ১৪৪ ব্যাটেলিয়নের খৈজুড়ি কোম্পানির কমান্ডার জগদীশ সিং বলেন, আমরা চোরাচালানের পণ্যসহ কাউকে ধরলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি ও মামলা করি। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের। আমাদের কাছে তদন্তের দায়িত্ব না থাকায় ভারতীয় কারা জড়িত সেটা জানতে পারিনা। আর ভারতীয়রা যেহেতু সীমানা অতিক্রম করেনা, তারা দেশের ভেতরে থাকলে আমরা তাদের ধরতে পারিনা।
বিএসএফ’র সাউথ-বাংলা ফ্রন্টিয়ারের হিসাবে, সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের (অবৈধ অনুপ্রবেশ) দায়ে দক্ষিণ-বাংলা সীমান্ত এলাকায় ২০১১ সালে ২৭৯ জন আটক হয়েছেন। ২০১২ সালে ৬৯১ জন, ২০১৩ সালে ৪১৬ জন, ২০১৪ সালে ৫১৭ জন এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ জন একই অপরাধে আটক হয়েছেন।
সীমান্তবর্তী গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে সাধারণ বাহক যেমন আছেন, তেমনি সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামের সাধারণ দোকানদার, খেটে খাওয়া মানুষজনও আছেন। দরিদ্র ঘরের এসব লোকজন পাসপোর্ট, ভিসার বিষয়টি বুঝেন না।
এদের মধ্যে যারা চোরাচালানিদের বাহক তারা গরু-ফেনসিডিল ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে যায়। আর দরিদ্র দোকানদাররা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে অথবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে যায় এবং বিক্রি করে আয় করেন। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি অবৈধ, তবু ভোগ্যপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোন চোরাচালানের সম্পর্ক নেই মনে করেন খোদ বিএসএফ কর্মকর্তারাই।
অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি’র ৩৮ ব্যাটেলিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকশি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবসময় বলি কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্ত পার হবার চেষ্টা না করে। অবৈধভাবে সীমানা পার হলে বিএসএফ গুলি করে দেবে সেটাও বলি।
ভারতীয়রা বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই, তারাও মাঝে মাঝে আমাদের সীমানায় ঢুকে পড়েন। সেক্ষেত্রে আমরাও তাদের ধরে বিএসএফকে ফেরত দিই।