চিরবিদায় নিলেন স্মৃতিসৌধের স্থপতি মাইনুল
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৫:১২,অপরাহ্ন ১০ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছিল যার নকশায়, সেই স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন আর নেই।
সোমবার দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন,“মাইনুল হোসেন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে রোববার ভর্তি হয়েছিলেন। উনার রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল। সোমবার বেলা আড়াইটায় উনার মৃত্যু হয়।”
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
১৯৫২ সালের ৫ মে জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ির দামপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। ছেলেবেলায় মইনুল হোসেন প্রকৌশলী হতে চেয়ে ছিলেন। তাই ১৯৭০ সালে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। মঈনুল হোসেন তখন পৈর্তৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির দামপাড়া গ্রামে চলে যান। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ফিরে যান ছাত্রাবাসে।
১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে EAH Consultant Ltd-এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগ দেন। কয়েক মাস পর ওই চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দেন `বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেড`-এ।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মঈনুল হোসেন স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭/১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি প্রথম হন এবং ২০ হাজার টাকা পুরস্কার পান। তার করা নকশায় সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এরপর তিনি স্থপতি সংসদ লিমিটেড, শহীদুল্যাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং কুয়েতের আল ট্রুট লিমিটেডে কাজ করেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মঈনুল হোসেন ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, IRDP ভবন কাওরানবাজার, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামের নকশা, কফিল উদ্দিন প্লাজা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি।
কিছু দিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গতকাল রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপও ছিলো। ডাক্তাররা তাঁকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু, সোমবার সকাল থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে সব চেষ্টার অবসান ঘটিয়ে বেলা আড়াইটায় তাঁর মৃত্যু হয়।