চসিক নির্বাচন : জলাবদ্ধতায় উপেক্ষিত অন্যান্য সমস্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৯:৪৫,অপরাহ্ন ১৫ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
এক জলাবদ্ধতা ইস্যুতেই ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে। উপেক্ষিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নগর পরিকল্পনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, জলাধার সংরক্ষণ, সবুজায়ন, রাস্তা, নর্দমা ও খালি জায়গার ব্যবস্থাকরণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতা হয় বছরে দুই-তিনবার। কিন্তু অন্য সমস্যাগুলো নগরবাসীকে প্রতিদিন মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় দাবি করেছেন, আগের মেয়ররা জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবেন।
২০১০ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম। তার দাবি জলাবদ্ধতাকে তিনি জলজটে নিয়ে এসেছেন। নির্বাচিত হলে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলজট নিরসন করবেন।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন,‘বাসযোগ্য নগরীর জন্য প্রথম দরকার স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদন। নগরীর সব মানুষ একত্রিত হওয়ার মতো কোন জায়গা কি নগরীতে আছে? পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান আছে কি? শিশু, বড়, নারী, প্রতিবন্ধীরা কি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছে? এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন,‘ফুটপাত দিয়ে মানুষ কি নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে? এটা না পারলেতো একটা নগর কখনো নগর হয় না। হকারদের বসার কোন জায়গা নেই। তারা ফুটপাত দখল করে আছে। একটা নগর সিস্টেমেতো তাকে জায়গা দিতে হবে। কারণ তার সঙ্গে পথচারি সম্পর্কযুক্ত। নালাগুলোকে কেন ডাস্টবিন করে রাখা হয়েছে? এসব বিষয়ে প্রার্থীদের কথা বলতে হবে।’
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন,‘জলাবদ্ধতা সমস্যা হয় বছরে দুই থেকে তিনবার। কিন্তু ঘর থেকে বের হলেই প্রতিদিন যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যায় আমাদের প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে। এসব সমস্যা নিয়ে প্রার্থীদের কোন আলোচনা নেই। ’
তিনি বলেন,‘চট্টগ্রাম নগরকে নান্দনিক, জনবান্ধব, যানজটমুক্ত জলাবদ্ধতামুক্ত ও দূষণ মুক্ত নগরে পরিণত করতে হলে যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে টেকসই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ’
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৪১(১) ক অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে, করপোরেশনের তহবিলের সংগতি অনুযায়ী তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পাদন করা।
তৃতীয় তফসিলে ২৮টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- জনস্বাস্থ্য, জন্ম, মৃত্যু এবং বিবাহ রেজিস্ট্রি, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসা, সাহায্য এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রণালী, সাধারণ খেয়া পারাপার, সরকারি মৎস্যক্ষেত্র, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি সংক্রান্ত, দুধ সরবরাহ, সাধারণের বাজার প্রতিষ্ঠা, বেসরকারি বাজার, কসাইখানার ব্যবস্থা, পশু, শহর পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা, ইমারত নিয়ন্ত্রণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, জননিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, গোরস্থান ও শ্মশান, গাছ, পার্ক, উদ্যান ও বন, পুকুর ও নিম্নাঞ্চল পুনরুদ্ধার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা, সমাজকল্যাণ কর্পোরেশন ও উন্নয়ন।
নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন,‘একটি শহরের নান্দনিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা চলে গেলে নগর আর নগর থাকে না। একটা অপরিস্কার শহরে বিনিয়োগ হবে না, পর্যটক আসবে না, মানুষ স্বস্তিতে থাকবে না। ’
তিনি বলেন,‘এটা একদম পরীক্ষিত বিষয় যে নগর পরিবেশ যত ভালো হবে, দৃষ্টি নন্দন হবে তত মানুষের সুখ শান্তি বাড়বে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে প্রার্থীদের কোন প্রতিশ্রুতি নেই।’