চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন : অনলাইন প্রচারণায় প্রার্থীরা, টার্গেট তরুণ ভোটার
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২০:০৩,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তরুন ভোটারদের র্টাগেট করে প্রার্থীদের সমর্থনে খোলা হচ্ছে নতুন নতুন ফেইসবুক ফ্যান পেইজ, টুইটার অ্যাকাউন্ট। এসব পেইজে শোভা পাচ্ছে নানারকম পোস্টার। চাওয়া হচ্ছে ভোট ও দোয়া।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচারণার বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন চট্টগ্রামের হেভিওয়েট দুই মেয়র পদপ্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের লক্ষ্য তরুণ ভোটার।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরের রয়েছে প্রায় আটটি ফেইসবুক পেইজ এবং কয়েকটি ইভেন্ট। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলমের নামে রয়েছে দুইটি ফেইসবুক পেইজ, টুইটার একাউন্ট ও কয়েকটি ইভেন্ট ও গ্রুপ।
২৪ মার্চ থেকে নিজের ফেইসবুক পেইজে প্রতিদিনই নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তব্য পোস্ট করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম। তিনি আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রোববার রাতে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন,‘নির্বাচিত হবার পর থেকে ড্রেনেজ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে মনজুর সাহেব পাহাড়সম ব্যর্থ হয়েছেন। মনজুর সাহেবের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে রেবিয়ে আসতে সৎ, সদালাপী, সৃজনশীল নেতৃত্বের অধিকারী আ জ ম নাছিরের বিকল্প নেই। তাই ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামবাসীকে হাতি প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ’
পিছিয়ে নেই আরেক মেয়র পদপ্রার্থী এম মনজুর আলমও।
মনজুরের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।
তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘চসিক নির্বাচনে উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনীত প্রার্থী। এ প্রার্থীকে বিজয়ী করা এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে মত জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার ভোট ডাকাতি করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। যা গনতন্ত্র বিরোধী। ’
ওয়াহিদুল আলম আরো লিখেন,‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থা গ্রহণের এ সুযোগ। নির্বাচনও আন্দোলনের একটি অংশ। তাই এখন কোন গ্রুপিং কিংবা অন্তকোন্দল করার সময় নয়। সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। এছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করার সময় নেই। ’
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খান শনিবার রাতে তার ফেইসবুকে একটি পোস্টারের মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আগামী ২৮ এপ্রিল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যালট বিপ্লব ঘটবে। ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে কমলা লেবুতে ভোট দিয়ে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে হবে। ’
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি লিখেছেন, ‘বীর মহিউদ্দীন তুলেছে পাল,নাছির উদ্দিন ধরবে হাল। পরিবর্তনের গণকন্ঠে সুর মিলিয়ে আজ বলতে পারি, হারিয়ে যাওয়া রূপে,লাবণ্যে অনন্যা চাঁটগা নগরীকে আর কোনভাবেই অযোগ্য, বাকশক্তিহীন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়া যায় না। আগামী ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে হাতি মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের অভিযাত্রাকে স্বাগত জানাই। ’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক আবু কায়সার রনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন,‘জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইকে হাতি মার্কায় ভোট দিন।’
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু লিখেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে মনজুর আলম চট্টগ্রামের যে উন্নয়ন করেছেন, তা দুই দশকেও হয়নি। নগর ভবনকে দুর্নীতির আখড়া না করে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ ও সবার নাগালে করেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া মনজুর আলমকে সমর্থন দিয়েছেন। মনজুরের জয় মানে বেগম জিয়ারই জয়।’
নির্বাচনী প্রচারণার নতুন এই কৌশল আকৃষ্ট করেছে ভোটারদেরও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সীমান্ত রায় বলেন,‘আসলে আমরা পোস্টার ও মাইকিংয়ে প্রচারণা দেখে অভ্যস্ত। প্রচারণার নতুন এই ধারার ফলে অনেকের মন্তব্য থেকে প্রার্থীদের বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। গত নির্বাচনে প্রার্থীদের গণসংযোগ সীমাবদ্ধ ছিল। এবার ইন্টারনেটভিত্তিক যে প্রচারণা হচ্ছে নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। কারণ বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ’
উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলমের ছেলে সরোয়ার আলম বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এর সুবিধা থেকে আমরা তো আর দূরে থাকতে পারি না। এটি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম, তাই ফেইসবুকে প্রচারণার মাধ্যমে আমরা জনগণের আরো কাছাকাছি যেতে চাই। বর্তমানে ফেইসবুকে তরুণরাই বেশি থাকছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের বার্তা তাদের কাছেও পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি।’
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন আন্দোলনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের মতামত গ্রহণ করছি। ভোটারদের ভয়েস এসএমএস, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা ও টুইটারে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। ইনশাল্লাহ এটি তরুণ প্রজম্মের মধ্যে পরিবর্তন আনবে। ভোটারদের সরাসরি টেলিফোন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের একান্ত সহকারি রায়হান ইউসুফ বলেন,‘ফেইসবুকে প্রচারণা মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ফেইসবুকে দেশে বিদেশে নাছির ভাইয়ের অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন। তারা ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাছির ভাই যুব ও ছাত্র সমাজের নয়নের মণি হিসেবে পরিচিত। ’ এছাড়া ভয়েস এসএমএস, ক্ষুদে বার্তাসহ নানাভাবে সরাসরি ভোটারের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য অধিকার বঞ্চিত জনগণের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সুখ দুঃখের কথা জানা। তাই নাছির ভাই নগরীর প্রতিটি ভোটারের কাছে যেতে দিন-রাত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।