গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২২:৫৬,অপরাহ্ন ০৪ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও বুধবার আদালতে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে বিচারাধীন মামলা দুটির বিচারক পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে করা রীট নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালত মামলার কার্যক্রম চালাতে পারে না বলে আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনজীবিরা।
একদিকে উচ্চ আদালতে বিচারক পরিবর্তনে খালেদা জিয়ার আবেদন নিস্পত্তি না হওয়ার মধ্যেই নিম্ন আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়না জারি করেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা স্বত্বেও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
নিম্ন আদালতের এ আদেশবলে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আইনি জটিলতায় পরতে পারে সরকার। নতুন করে পরতে পারে কোন আইনি সংকটে। তা নিয়েই চিন্তিত সরকার। এজন্যই সরকার এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করছে না বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল ও বিজ্ঞ আইনজীবীরা।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে এখনই গ্রেফতার করা হলে চলমান রাজনৈতিক সংকট নুতন মোড় নিবে। যা সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া মুশকিল হতে পারে। তাই সরকার আপাতত সেদিকে যাবে না। এজন্য নিচ্ছে ভিন্ন কৌশল।
প্রসঙ্গত জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত। বুধবার এই মামলা দু’টির শুনানির তারিখ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব) মাহবুব হোসেন বলেছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে হাজিরা দিতে যেতে পারছেন না। চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি করে যাবে।
ছোট ছেলে কোকোর কুলখানীতে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া
অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কুলখানী অনুষ্ঠিত হবে বুধবার।
এদিন সকাল থেকে সারাদিন গুলশান বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কুরআনখানী, মিলাদ-মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান হবে। এজন্য মাদ্রাসার ছাত্ররা সকাল থেকেই কুরআন তেলাওয়াত করবে কার্যালয়ে।
বিএনপিসহ ২০ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
তিনি জানান, সারা দেশে আরাফাত রহমান কোকোর কুলখানী আয়োজন করার জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
গ্রেফতার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসেনর উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি যদি ন্যায় বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা পান, সরকার যদি খালেদা জিয়ার যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করে, আদালতে হাজির হওয়ার পরে জামিন দেয় এবং গুলশান কার্যালয়ে ফিরে আসার নিশ্চয়তা দেয়। তাহলে হয়তো তিনি আদালতে যেতে পারেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাকে আর তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না।
একই বিষয়ে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেছেন, কার্যালয় তল্লাশির যে আদেশ আদালত দিয়েছে তা নিয়ে আমিসহ সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত। সবাই আশঙ্কা করছেন তল্লাশির নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাই বিস্ফোরকদ্রব্য রেখে খালেদা জিয়াকে দায়ী করতে পারে।
অপরদিকে সরকারের তরফ থেকে জানা গেছে, খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হলে বুধবারই তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
২ মার্চ পর্যন্ত আদালতের পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ পায়নি বলে জানানো হয়েছে। অন্য একটি মামলায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর যে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তা ওই দিন রাতেই গুলশান থানায় পৌঁছেছে বলে থানার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন ।
বুধবার খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তাঁর অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া এর আগে আদালতে যাননি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবারও তিনি যাবেন না। তাছাড়া, যেহেতু খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করা হয়েছে, সেহেতু আদালতে হাজিরার প্রশ্নই আসে না।
তাহলে খালেদা জিয়ার অবস্থান কী হবে, এ প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘তিনি যে রকম আছেন, সে রকমই থাকবেন।’
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো, খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে বের করতে গত দুই মাসে সরকার একের পর এক নানা কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং সর্বশেষ ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তাঁদের আশঙ্কা, খালেদা জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করে ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে পারে পুলিশ। তল্লাশির নামে ওই কার্যালয়ে থাকা বিএনপির নেতা ও কর্মকর্তাদের বের করে কার্যালয়টি বন্ধ করে দিতে পারে, যাতে খালেদা জিয়া আদালত থেকে জামিন পেলেও ওই কার্যালয়ে আর ঢুকতে না পারেন। আর এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হচ্ছেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা।
৩ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন একথা জানান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা পরিচালনাকারী আদালত পরিবর্তনের আবেদনের সম্পূরক হিসেবে এই আবেদনটি করা হয়েছে।
আগামী ৫ মার্চ স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদনটি শুনানির জন্য মামলার কার্যতালিকায় আসতে পারে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা।