গোবিন্দ হালদার চলে গেলেন
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৭:৪৬,অপরাহ্ন ১৮ জানুয়ারি ২০১৫
কলকাতা:: ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ কিংবা ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা এমন অনেক কালজয়ী গানের স্রষ্টা গোবিন্দ হালদার আর নেই। দীর্ঘ রোগভোগের পর গতকাল শনিবার কলকাতার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
গত সপ্তাহে ফের অসুস্থ হয়ে গোবিন্দ হালদার ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার মানিকতলার জিতেন্দ্র নাথ রায় হাসপাতালে। সেখানেই গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে, জামাইসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর কিডনির অসুস্থতা নিয়ে প্রথম কলকাতার একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গোবিন্দ হালদার। ২০ ডিসেম্বর রাতে হাসপাতালে অসুস্থ গোবিন্দ হালদারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন গোবিন্দ হালদারকে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করার আশ্বাস দেন তিনি। গত ২২ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশের রাস্ট্রপতি আবদুল হামিদও পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে গোবিন্দ হালদারকে হাসপাতালে দেখে যান। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত চিকিৎসা খরচের অর্থ গত ৩১ ডিসেম্বর বুধবার কলকাতার কাঁকুরগাছি এলাকায় গোবিন্দ হালদারের বাসভবনে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার জকি আহাদ।
গোবিন্দ হালদার জন্মেছিলেন অবিভক্ত যশোর জেলার বনগ্রামে। তিনি মূলত একজন কবি ও গীতিকার। তাঁর প্রথম কবিতা ছিল ‘আর কতদিন’। তিনি লিখেছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার কবিতা ও গান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ দূর দিগন্ত। গোবিন্দ হালদার আয়কর দপ্তরের একজন কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। অবসর নিয়েছেনও এখান থেকে।
গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার জকি আহাদসহ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কলকাতার উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে গোবিন্দ হালদারের মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় গোবিন্দ হালদারের শেষকৃত্য হয় কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে।
শোক: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, গোবিন্দ হালদারের দেশাত্মবোধক গান ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে লাখ লাখ বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খ্যাতিমান এই গীতিকারের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ তাদের একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে হারাল।
গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া প্রমুখ।