গেমিং পিসি কেনার আগে যা জানা অব্যশই দরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৩:৫০,অপরাহ্ন ০৩ নভেম্বর ২০১৪
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি বিজ্ঞানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। নতুন নতুন পণ্য, অ্যাপ, অপারেটং সিস্টেম, গেম ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বর্তমানে দুইটি জিনিস বেশ জনপ্রিয়। একটি হচ্ছে গেম, আরেকটি হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড পণ্য। গেম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। কেউ পিসিতে গেম খেলে, কেউ মোবাইলে গেম খেলে আবার কেউ ট্যাবলেটে গেম খেলে। গেম প্রেমীদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড পণ্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অ্যান্ড্রয়ডের বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও মজাদার গেম সমূহের জন্য গেম প্রেমীদের কাছে এটা বেশ পছন্দের পণ্য। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গেমিং পিসির চাহিদা কমে গেছে। গেম খেলার জন্য গেমারদের পছন্দের তালিকের শীর্ষেই রয়েছে গেমিং পিসি। গেমিং পিসি কেনার আগে যেমন কিছু জিনিস জানা দরকার তেমনি অ্যান্ড্রয়েড পণ্য কেনার পরেও কিছু জিনিস অব্যশই প্রয়োজন। আজ আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথমেই বলা যাক গেমিং পিসির কথা। গেমিং এর জন্য এর পার্টসগুলো সঠিক ভাবে সিলেক্ট করতে হবে। গেমিংএর প্রাণ হল প্রসেসর ও গ্রাফিক্সকার্ড। এরপর রয়েছে মাদারবোর্ড, র্যাম, মনিটর, কাসিং, পাওয়ারসাপ্লাই, মাউস ও কিবোর্ড। এগুলো সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকতে হবে। যদি বেশি ধারনা না থাকে তবে গেমিং পিসি কিনতে একজন এক্সপার্টকে সাথে নিতে হবে। গেমিং পিসি কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে-
প্রসেসর
বর্তমানে প্রসেসরের মধ্যে রয়েছে ইন্টেল এবং এএমডি তবে গেমিং এর জন্য ইন্টেল পারফেক্ট। যদিও দামে এবং কিছু ক্ষেত্রে এএমডি ইন্টেল থেকে এগিয়ে কিন্তু ওভারল পারফমেন্সে ইন্টেল এগিয়ে। তাই আমি গেমিং এর জন্য ইন্টেলকে বেছে নিয়েছি। প্রসেসরের ক্ষেত্রে আপনি কোর আই ৩/৫/৭ ২য় অথবা ৩য় জেনারেশন আপনি চোখ বুঝে নিতে পারেন। পারফেক্ট হবে কোর আই ৫। যদি বাজেট বাড়াতে পারেন তবে নিতে পারেন কোর আই ৭। আর যদি বাজেট কম হয় তবে নিতে পারেন কোর আই।
গ্রাফিক্সকার্ড
গেমিং গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া যেন অচল। কিন্তু আমাদের অনেকের গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই বলেই চলে। প্রসেসরে যেমন ইন্টেল এবং এএমডি, তেমনি গ্রাফিক্সকার্ডের বেলায় রয়েছে এএমডি রাওডেন ও এনভিডিয়া। এএমডি রাওডেন ও এনভিডিয়া দুটোর পারফমেন্স একই শুধু ১৯/২০ ওভারলে কেউ কারো থেকে কম নয়। তাই আপনি এখানেও যে কোন একটি আপনার বাজেট অনুযায়ী নিতে পারেন। এএমডির সর্বশেষ সিরিজ হচ্ছে এইচডি ৭৯০০। এনভিডিয়া ক্ষেত্রে জিটিএক্স ৬০০। আপনাকে ৩ডির গেমিং এর জন্য এএমডির ৫৭০০/৬৭০০/৭৭০০ বা তার উপরের সিরিজের দিকে যেতে হবে। আর এনভিডিয়ার ক্ষেত্রে যেতে হবে জিটিএক্স ৪০০ বা তার উপরের সিরিজের দিকে। এর কম হলেও চলবে কিন্তু আসল ৩ডি-র যেই পারফমেন্স তা পাবেন না। গ্রাফিক্সকার্ড এর জন্য ভাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ গিগা বাইট (gigabyte), মসি (msi), সাপ্পহিরে (sapphire), আসুস (asus), এক্সফক্স (xfx)।
মাদারবোর্ড
ভাল পারফমেন্স পেতে হলে একটি ভাল মাদারবোর্ড কিনতে হবে। ইন্টেলের ২য় এবং ৩য় জেনারেসন জন্য সকেট ১১৫৫ যা উভয় সাপোর্ট করবে। ভাল মাদারবোর্ডের ক্ষেত্রে আপনাকে পিসিআইই স্লটের সংখ্যা দেখে নিতে হবে। এখন সব গ্রাফিক্সকার্ডই পিসিআইই এক্স১৬ স্লটের। আপনি যদি একের অধিক গ্রাফিক্সকার্ড লাগাতে চান তবে আপনাকে একাধিক পিসিআইই স্লটের মাদারবোর্ড কিনতে হবে এবং নতুন সব মাদারবোর্ডে ইউএসবি ৩.০ রয়েছে। সাউন্দের ক্ষেত্রে দেখতে হবে তা ৬ কিংবা ৮ চ্যানেল সাপোর্ট করে কিনা। এছাড়াও কিছু মাদারবোর্ডে বিলট ইন ওয়াইফাই, ব্লুটুথ রয়েছে। মাদারবোর্ডের ভাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছেঃ গিগা বাইট (gigabyte), মসি (msi), আসুস (asus)।
র্যাম
গেমিং এর জন্য আপনি ডিডিআর ৩ এর /১৬০০/১৮৩৩/২০০০/২১৩৩ মেগাহার্জ নিতে পারেন। ১৩৩৩ মেগাহার্জ না নেওয়াই ভাল। বাজেটের মধ্যে ১৬০০ মেগাহার্জ নিতে পারেন। তবে বাজেট বেশি হলে ১৮৩৩/২০০০/২১৩৩ মেগাহার্জ নিতে পারেন। র্যামের ভাল ব্র্যান্ডগুলো হলঃ করসেয়ার (corsair), ট্র্যানসেন্ড (transcend), টুয়িনমোস (twinmos), এ-ডাটা (a-data), অ্যাপেসার (apacer)।
মনিটর
মনিটর কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে দেখে নিতে হবে এর ব্রাইটনেস, কন্ট্রাস্ট রেশিও এবং রেসপন্স টাইম। রেজুলেসনের ক্ষেত্রে আপনাকে ১৯২০*১০৮০ বেছে নিতে হবে। যত বড় মনিটর নিবেন গেম খেলতে তত মজা পাবেন। সাইজ ২১.৫” থেকে ২৭” পর্যন্ত। বাজারে এখন ৩ডি মনিটর পাওয়া যায়, তবে দাম একটু বেশি। মনিটরের মধ্যে ভাল ব্র্যান্ডগুলো হলঃ স্যামসাং (samsung), এলজি(lg), আসুস (asus), ডেল (dell), ভিউসওনিস (viewsonic), এসআর (acer)।
কেসিং ও পাওয়ারসাপ্লাই
আমারা প্রায় কেসিং এর ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং পাওয়ারসাপ্লাই এর ব্যাপারে তো আরও কম। ভাল গেমিং পিসির জন্য ভাল কেসিং দরকার। ব্র্যান্ডের কেসিংগুলোর দাম একটু বেশি। তাই গেমিং পিসি কিনতে হলে আপনাকে আলাদা বাজেট রাখতে হবে কাসিং ও পাওয়ারসাপ্লাই এর জন্য। এখানে কৃপণতা করবেন তো পরে বিপদে পরবেন। আপনার পিসির পাওয়ারসাপ্লাই কত ওয়াটের লাগবে তা আপনি নিচের সাইট থেকে জেনে নিতে পারবেন-
www.extreme.outervision.com/psucalculatorlite.jsp
কেসিং ও পাওয়ারসাপ্লইা-এর জন্য ভাল ব্র্যান্ডগুলো হলঃ গিগা বাইট (gigabyte), থারমালটেক (thermaltake), এক্সফক্স (xfx))।
মাউস ও কিবোর্ড
গেম খেলার জন্য আলাদা গেমিং মাউস ও কিবোর্ড রয়েছে। এগুলোর দামও একটু বেশি। ভাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হচ্ছেঃ লোজিক্টেক, এ৪-টেক, গিগা বাইট, জিনিয়াস।
হার্ডডিস্ক
গেমিং এর জন্য আলাদা হার্ডডিস্ক রয়েছে, যেগুলো সাধারণ হার্ডডিস্ক থেকে দাম একটু বেশি। ভাল ব্র্যান্ডগুলো হলঃ গিগা বাইট, অয়েস্টার্ন ডিজিটাল ব্ল্যাক, ব্লু, গ্রিন।
পিসি কেনার ক্ষেত্রে এই সব বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সবসময় ভাল জিনিসগুলো কিনা উচিত। এর ফলে যেমন কাজের পারফারমেন্স ভাল পাবেন তেমনি টিকেও অনেক দিন। তাই দেখে শুনে ভাল জিনিসটাই কেনা উচিত। আর ভাল জিনিসের দাম সবসময় একটু বেশি হয়।
ইসমত আরা বেগম