‘গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন সাংসদপুত্র’
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০০:৩৮,অপরাহ্ন ১২ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
রাজধানীতে গভীর রাতে গুলিবর্ষণে দুজন নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনি সামান্য যানজটে পড়ে উত্তেজিত হয়ে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। রনি নিজের লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়েন বলে ‘স্বীকার করেছেন’ জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার বলেন, “গুলিতে কেউ মারা গিয়েছিল কি না তা তার (রনি) জানা ছিল না। তাছাড়া তাকে যে পুলিশ শনাক্ত করতে পারবে সেটিও তার ধারণায় ছিল না।”
গুলি ছোঁড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি কী বলেছেন জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক বলেন, “নেশাগ্রস্ত থাকায় সে উত্তেজিত ছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাই সামান্য যানজটে আটকা পড়ে গুলি চালিয়েছে।” প্রায় দুই মাস আগের এ ঘটনায় গত ৩১ মে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ পিনু খানের ছেলে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেছিলেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান।
তবে গ্রেপ্তারের পরদিন তার গাড়িচালক ইমরান ফকির ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলেও সেখানে স্বীকারোক্তি দেননি রনি। তাই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করে তাকে চার দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ, যা গত বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। “আদালতেও যেন তিনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন সেজন্য পুলিশ চেষ্টা করছে,” বলেন এসআই দীপক।
১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে তাতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর ২৪ মে মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে আসার এক সপ্তাহের মাথায় রনি ও তার গাড়িচালক গ্রেপ্তার হন। ওই রাতে সাংসদপুত্র রনির গাড়িতে আরও তিনজন ছিলেন এবং তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা দীপক কুমার জানিয়েছেন। “তাদের খোঁজা হচ্ছে। মামলায় তাদের সাক্ষী করা হবে,” বলেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমের কাছে ওই তিনজনের পরিচয় জানাতে চাননি এসআই দীপক।
এদিকে রনির পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত ৩ এপ্রিল থেকে বখতিয়ারের ৪০ দিন বয়সী মেয়ে রুখসানা এ্যাপোলো হাসপাতালে প্রথমে আইসিইউ ও পরবর্তীতে লাইভ সাপোর্টে ছিল। “এই অবস্থায় রনি নিউ ইস্কাটনে গিয়ে গাড়ি থেকে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে-এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না।” স্বামী হত্যায় গ্রেপ্তার সাংসদের ছেলে রনিকে ‘একবার’ দেখতে গত বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে উপস্থিত হন নিহত অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলীর স্ত্রী সালমা বেগম।
তিনি বলেন, “বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় আসামিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আমি দেখতে পাই। “সে এমনভাবে বইসা ছিল, দেখে মনে হইলো মেহমান। সে যে খুনি সেটা বোঝাই যায় না।” রনিকে সরাসরি দেখলেও তার সঙ্গে কথা বলতে না পেরে আক্ষেপ করেন সালমা বেগম। ‘খুনি’র কাছে তার নিরাপরাধ স্বামীকে হত্যার কারণ জানতে চাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার।
সালমা বলেন, “পুলিশ ওকে বুঝতেই দেয়নি আমরা কারা। অবশ্য সে (রনি) হয়তো পরে বুঝতে পেরেছে আমরা কারা; এইজন্য কয়েকবার গলায় ঢোক গিলেছিল।”
তিনিসহ পরিবারের কারো সঙ্গে এমপি পিনু খান বা তার পক্ষের কেউ যোগাযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে সালমা বলেন, “কেউই যোগাযোগ করে নাই। হাসপাতালে থাইকা আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেসি। কেউ আমাগো সাহায্যও করে নাই।” একমাত্র মেয়ের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে জানিয়ে ‘সহায় সম্বলহীন’ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত এই নারী বলেন, “আমি এখন চলুম কেমনে?”