গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৫:৩৫,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকার ও বিরোধী দলসহ সবাইকে জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশন ও বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে মহাজোট সরকার গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। আবদুল হামিদ বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে, বাঙালি জাতিকে আবারও ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারব। এই সুমহান প্রয়াসে আমাদেরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমেই দেশবাসী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করবে। একইভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান রয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
আবদুল হামিদ বলেন, সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ রূপান্তরিত হবে এক আধুনিক, জ্ঞান-নির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশে। এসব সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জনে সরকার ২০১০-২১ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ২০১১-১৫ মেয়াদি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জনবল তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার সর্বস্তরে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পৃক্ত করে ‘আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে সরকার তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। আবদুল হামিদ বলেন, সরকার দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে সুষ্ঠু এবং সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর বাস্তবায়নকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে তা জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূচিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ নীতি সমুন্নত রেখেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও জোরদার করার লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রনায়কোচিত ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি সুদৃঢ় অঙ্গীকার এবং নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন দপ্তর ও অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল সাউথ-সাউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৪’ প্রদান করে। সরকারের বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতির ফলে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন’-এর কাউন্সিল সদস্যসহ ১৩টি সংস্থার নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এসব বিজয় বাংলাদেশের জন্য সম্মান ও গৌরবের পরিচায়ক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক অবস্থান সুদৃঢ়করণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুফল। সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক সম্পর্ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্মকাণ্ড ও সাফল্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
সূত্র : বাসস।