খাদ্যসমস্যার চিরসমাধান অথবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৮:৫৪,অপরাহ্ন ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪
বিচিত্র ডেস্ক::
পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ কঠিন আবরণের নিচে আটকে পড়ে আছে প্রাচীনতম জল। এবং এর পরিমাণ অকল্পনীয়। সম্প্রতি কানাডীয় ভূপ্রকৃতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত এক নিরীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ কঠিন আবরণের নিচে আটক এ খনিজ পানির পরিমাণ অন্তত ১ কোটি ১০ লাখ ঘনকিলোমিটার, যা পৃথিবীর সমস্ত সাগর, নদী সরোবরের পানির চেয়েও বেশি। প্রাচীনতম এ জল খনিজ পাথরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অবিরত হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে চলেছে। যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে খাদ্যের বৃহত্তর উৎস হতে পারে ঐ জল। পৃথিবীর উপরিভাগের জল যদি মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে পারে, তাহলে ভূগর্ভের প্রাচীন মিঠা পানি যে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বারবারা শেরউড ললার জানান, ভূগর্ভস্থ অকল্পনীয় পরিমাণ পানিকে আটককারী অকল্পনীয় খনিজ পাথরের মজুদ রয়েছে সেখানে। বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনকভাবে এতোদিন বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। খনিজ পাথর ও জলের এ বিশাল ভাণ্ডারে প্রাচীন পৃথিবীর ক্রমবিকাশ বুঝতে পারার মতো বিপুল তথ্য মানুষের আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে। এবং পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক অনাবিষ্কৃত রহস্যের সমাধান, সেই আবিষ্কারগুলোর আশায় হয়ত অপেক্ষা করে আছে। ভূগর্ভস্থ খনিজ ও জলের অকল্পনীয় ঐ সংগ্রহকে, বারবারা একটি ঘুমন্ত দৈত্য হিসেবে অভিহিত করেন। যে দৈত্যকে কাজে লাগিয়ে হয়ত অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হবে।
কিভাবে আবিষ্কৃত হলো এই জল, জানা যাক। ইউরোপ ও আমেরিকার ভূপ্রকৃতিবিদদের একটি সমন্বিত দল, বিশেষ ভৌগলিক প্রকল্পের আওতায় গবেষণায় নেমেছিলেন। প্রকল্পের নাম, ‘ডিপ কার্বন অবজার্ভেটরি প্রোগ্রাম।’ এ প্রকল্পের আওতায় মাটির গভীরে কার্বন ও কার্বনঘটিত রাসায়নিক ক্রিয়াবিক্রিয়ার ফলে জীবনবান্ধব হাইড্রোজেনের পরিমাণ নির্ণয় করার কাজ চলছিল। কানাডার পৃথক উনিশটি স্থানের ভূগর্ভাভ্যন্তরে গবেষণা চালানো শুরু হলে, চমকপ্রদ এ তথ্য উঠে আসতে থাকে। উনিশটি স্থানে খনিজ পাথর সরিয়ে সংগৃহিত পানির বয়স ১০০ কোটি থেকে ২৫০ কোটি বছরের মধ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজ অধ্যাপক বিশিষ্ট ভূপ্রকৃতিবিদ ক্রিস ব্যালেন্টাইন যে কারণে আমোদ করে বললেন, ‘পূর্বে ধারণা করা হতো, মহাদেশীয় ভূভাগে হাইড্রোজেন উৎপাদনের পরিমাণ এতই কম, যে উপেক্ষা করা চলে। মনে হচ্ছে এ ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। ভূগর্ভে যদি এই পরিমাণ খনিজ জল জমা থাকে, তাহলে মহাদেশীয় ভূভাগে উৎপাদিত হাইড্রোজেন, মহাসাগরীয় অংশে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের তুলনায় কোন অংশে কম হবার কথা নয়। আমাদের পায়ের নিচে যা রয়েছে, তা সামান্য পাথরের চেয়েও অসম্ভব চমকপ্রদ কিছু।’ অধ্যাপক বারবারা শেরউড মনে করেন, গবেষক দলের এখন এ জলে প্রাণের সম্ভাবনাকে সবার আগে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
যেহেতু এ জল খুব কম সময় হলো আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা এখনও এর ফলাফলঘটিত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেননি, সুতরাং এখনই শেষ কথা বলা অনুচিত হবে। শুধু সম্ভাবনার কথাই আমরা বলতে পারি। তা হলো, হয়ত এমন কিছু দেখা আমরা পেতে চলেছি, যা মনুষ্যপ্রজাতিকে খাদ্যের অফুরান ভাণ্ডার উপহার দিতে পারবে। তবে মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, নিরেট পাথরের নিচে আটকে পড়া ভূগর্ভস্থ এ ভূতুড়ে জলের মালিকানা নিয়েও ক্রমে বেঁধে যেতে পারে ধুন্ধুমার। উড়ো উড়ো শোনা যায়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকি হবে জল নিয়ে। কে বলতে পারে, এই জলই সেই জল কিনা।