কোটি টাকা করে পাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৮:২৪,অপরাহ্ন ২২ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা ভালো ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে, শিক্ষার উপকরণ না কিনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষার মান উন্নয়নের একটি প্রকল্পের আওতায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়কেই কোটি টাকা করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। কিছু অর্থ বিতরণের কাজ চলছে।
শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সচেতনতা তৈরি, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য এই অর্থ দেয়া হচ্ছে। সরকারি ও ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রকল্পের অর্থ পাচ্ছে। কিন্তু এই তালিকায় বিতর্কিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢুকে পড়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও রয়েছে এই তালিকায়। এটি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে মালিকদের আয় বাড়বে কিন্তু শিক্ষার মান বাড়বে না।
এই তালিকার বিষয়ে প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা আমরা তৈরি করিনি। আমরা যতদূর জানি, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকল্প তৈরির সময় বিশ্বব্যাংক এই তালিকা তৈরি করে দিয়েছে। এখন টাকা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ১২ থেকে ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে যাচ্ছে। এদের বন্ধ করে দিতে হবে। আদালতে মামলা থাকায় এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) উপ-প্রকল্প কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ টাকা দেয়া হচ্ছে। হেকেপ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প। কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিট টাকা দেয়ার জন্য সরকারি ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে এ ক্যাটাগরির ১০টি, বি ক্যাটাগরির ২১টি এবং সি ক্যাটাগরির ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করে তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষক সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। শিক্ষক সংখ্যা দুইশ’র বেশি হলে ‘এ’ ক্যাটাগরি, ১০০ থেকে দুইশ’র মধ্যে হলে ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং শিক্ষক সংখ্যা একশ’র কম হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর ‘এ’ ক্যাটাগরির ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিকে ১ কোটি ৭৫ লাখ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে ২ কোটি ১১ লাখ এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তিন বছরে এই টাকা ছাড় করা হবে। এই ক্যাটাগরির অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি-চট্টগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি -চট্টগ্রাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিট টাকা নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করলেও মাত্র তিনটি আবেদন করে চুক্তি করেছে। আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইউজিসির এ টাকা গ্রহণ করবে না। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিজস্ব সেল রয়েছে।
‘বি’ ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৭৫ হাজার ডলার ছাড়াও বিভাগ ভিত্তিক টাকা পাবে, যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় কোটি টাকারও বেশি। এই ক্যাটাগরির ২১ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।
‘সি’ ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৫০ হাজার ডলার ছাড়াও বিভাগ ভিত্তিক টাকা পাবে, যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় কোটি টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এই ক্যাটাগরিতে বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইবাইস ইউনিভার্সিটিসহ ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
যে খাতে টাকা খরচ করা যাবে: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা, সেল অফিসের আসবাবপত্র, ফটোকপিয়ার, বই, এয়ারকন্ডিশন, প্রিন্টার, যাতায়াত ভাড়া ইত্যাদি খাতে এই অর্থ ব্যয় করা যাবে। এই অর্থ দিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দেয়া যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গাজী এম এ জলিল বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন জবাবদিহিতার মধ্যে নেই। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইনই মানছে না। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য অর্থ দিয়ে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। আগে এগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি মত প্রকাশ করেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়বে না, মালিকদের আয় বাড়বে।
ইউজিসির কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিটের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, আমরা বিশ্বব্যাংকের তালিকা নিয়েই কাজ করছি। তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে দিয়েছে। বিতর্কিত ও আইন না মানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন টাকা দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইন মানছে বা মানছে না তা দেখার জন্য ইউজিসির আলাদা বিভাগ রয়েছে। তারাই সেটি দেখবে। আমাদের কাজ আমরা করছি। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না; এদের টাকা দেয়া কতটা যৌক্তিক-এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনিট প্রধান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে আমাদের কাছে তালিকা দেয়া হলে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।