কিবরিয়া হত্যা মামলা : আরিফসহ ১০জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৪:১৪,অপরাহ্ন ২১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় নতুন মেয়র আরিফ সহ ১০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
রোববার দুপুর ১টার দিকে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতের বিচারক রশিদ আহমেদ এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন্নেছা পারুল এই ১১ জনের নাম যোগ করে হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া খাতুনের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চতুর্থ দফার সম্পূরক চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।
রবিবার সম্পূরক চার্জশিট আদালতে জমা দেয়ার পর শুনানি শেষে নতুন আসামীদের পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেন আদালত। আদালত আগামী ৮ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেন আদালত।
এর আগে ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুননেছা পারুল নতুন ১১ জনসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর বিচারক রোকেয়া বেগমের আদালতে তৃতীয় দফার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।
খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল উসজিহাদের নেতা মুফতি হান্নান সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছ, মুফতি সফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মোহাম্মদ আলী, বদরুলসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরবর্তীকালে ৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার দুই আসামি আরিফুল হক চৌধুরী ও জিকে গউসের নাম ঠিকানা সংশোধনপূর্বক ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ দফা সম্পূরক চার্জশিটের নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ২০০৫ সালে চার্জশিট ও ২০১১ সালে দুবার সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়। ওই সময় বাদীপক্ষ নারাজি দিয়ে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে আদালত আবারও চার্জশিট প্রদানের নির্দেশ দেয় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। ২০০৫ সালে কলঙ্কজনক এ ঘটনাটি ঘটার পর বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বের গণমাধ্যমসমূহে বিষয়টি তুমুল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তোলে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের সচেতন মহল কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত দু’টি মামলার ৯ বছরেও বিচারকার্য শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন হবিগঞ্জ তথা সারা দেশের মানুষ। বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন কিবরিয়া পরিবার।
২০০৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি হবিগঞ্জ গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাইপো শাহ মঞ্জুরুল হুদাসহ ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পরদিন দিন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমানে হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় ১টি হত্যা ও ১টি বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও বিস্ফোরক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এম সফিউজ্জামান নিযুক্ত হন। ঘটনার পর সিলেট রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি একেএম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা ছিলেন র্যাবের ইন্টেলিজেন্ট উইংয়ের তৎকালীন পরিচালক লে. কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ (পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহে নিহত), সিআইডির সিলেট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুর রহিম, র্যাব কর্মকর্তা তারেক, মেজর মামুন ও সিআইডির সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান। কমিটি ২০০৫ সালের ১৩ই মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মুহম্মদ ওমর ফারুকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। তদন্ত রিপোর্টে কি ছিল তা সে সময় প্রকাশ করা হয়নি।
পরবর্তীকালে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সি আতিক ৫২ দিন তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ২০শে মার্চ তৎকালীন শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি একেএম আবদুল কাইয়ুম, যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন জালাল, জমির আলী, তাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন মুমিন, সাহেদ আলী, সেলিম আহমেদ, আয়াত আলী, মুহিবুর রহমান, কাজল মিয়াসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু মামলার বাদী অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ খান আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিট অসম্পন্ন দাবি করে অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির আমলের চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করা হলে আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ প্রদান করে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে।
এদিকে, আদালতে চার্জশিট গ্রহণের পর আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে, বিএনপি এই চার্জশিটকে ভূয়া আখ্যায়িত করে শহরে আরো একটি মিছিল বের করে। একপর্যায়ে শহরের প্রধান সড়কের কোর্ট মসজিদের সামনে দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে যুবদলের এক কর্মী আহত হয়। তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।